Search Results
23 results found with an empty search
- সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বা সান ভালেন্তিনো এবং প্রেম দিবস।
প্রাচীন রোমের লুপারকালিয়া : লুপারকালিয়া কালের অতলে, যখন রোম ছিল দেবতা ও রাজাদের নগরী, তখন জন্ম নিয়েছিল এক আশ্চর্য উৎসব— ‘ লুপারকালিয়া ’। প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি, রোমান তরুণরা ছুটে বেরোত নগরের পথে, হাতে থাকত বলিদান দেওয়া ছাগলের চামড়া। সেই চামড়া দিয়ে তারা ছুঁয়ে দিত পছন্দের নারীদের, বিশ্বাস করত— এ ছোঁয়া নারীর গর্ভকে উর্বর করবে। এই উৎসবের প্রতীকি রঙ ছিল লাল । লাল মানে রক্ত— রক্ত মানে নতুন প্রাণের প্রতিশ্রুতি। দেবতা লুপারকাস বা ফাউনাস, যিনি ছিলেন প্রকৃতির রক্ষক, তিনিই ছিলেন এই উৎসবের কেন্দ্র। উৎসব চলাকালীন বলিদানের ছাগল ও কুকুরের রক্ত দিয়ে রাঙ্গানো হত তরুণদের কপাল, আর নগরী বয়ে যেত বাঁধভাঙা উল্লাসে। কিন্তু ক্রমেই এই উৎসবের পেছনে জমছিল কালো মেঘ, যা কালের স্রোতে ভয়ঙ্কর ঝড়ের রূপে নিজেকে প্রস্তুত করছিল। রোমে প্রেম ভালোবাসা নিষিদ্ধ হল । The Roman Emperor Claudius সম্রাট ক্লডিয়াস -এর কঠোর শাসনে রোম যখন বাঁধা পড়ল, তখন প্রেমের মন্দিরে জমল কালো মেঘ। তিনি ঘোষণা করলেন, সাম্রাজ্যের যুব শক্তি যদি প্রেম-ভালোবাসা বা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তবে তারা যুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই রোমে ভালোবাসার শপথ, মিলনের প্রতিশ্রুতি সবটাই নিষিদ্ধ হল। সম্রাটের আদেশ অমান্য করে কার সাধ্য ! কিন্তু এক তরুণ বিদ্রোহ করে বসলেন, সে সম্রাটের এহেন আদেশ মানতে নারাজ। তিনি ছিলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, এক খ্রিস্টান পুরোহিত। প্রেমের প্রতিশ্রুতির সামনে শাসকের নিষেধাজ্ঞা তাঁর কাছে ছিল তুচ্ছ। তিনি গোপনে বিবাহ দিতে শুরু করলেন প্রেমিকযুগলকে, প্রেমের পবিত্র বন্ধনে প্রেমিক যুগলকে বেঁধে দেওয়াই যেন তার জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়াল। সত্য চিরকাল গোপন থাকে না। Saint Valentine ভ্যালেন্টাইন বন্দি হলেন, সম্রাটের আদেশে মৃত্যুদন্ড ধার্য হল তার। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসার সেই যাজক রক্ত দিয়ে লিখলেন প্রেমের শেষ কবিতা। শোনা যায় মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর প্রিয়াকে লিখেছিলেন এক চিঠি, যার শেষে লেখা ছিল— "তোমার ভ্যালেন্টাইন"। ভালোবাসা যার হৃদয়ে, তাকে কি শাস্তি দিয়ে মুছে ফেলা যায়? পোপ গেলাসিয়াস সময় এগিয়ে এলো ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দ। পোপ গেলাসিয়াস I তিনি ঘোষণা করলেন, "লুপারকালিয়া পাপাচার, অনৈতিক। একে বিলুপ্ত করতে হবে!" বদলে তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস’ হিসেবে ভালোবাসার নামে উৎসর্গ করা হয় এই দিন। ‘রক্তের উৎসব আর নয়’ বলেও ফতোয়া জারি হল। ১৪শ শতকের কবি জিওফ্রে চসার তাঁর কাব্যে বললেন—"১৪ ফেব্রুয়ারি, এই দিনে পাখিরা জোড়া বাঁধে, হৃদয়ে প্রেম জাগে।" এভাবেই কবিতায়, গদ্যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল প্রেমের প্রতিবিম্ব রূপে। ক্রমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি শুরু হলো, ভালোবাসার মানুষকে লেখা হলো প্রথম "ভ্যালেন্টাইন কার্ড"। ভালোবাসার শরীরে লাগল বাণিজ্যের ছোঁয়া। Valentine Day Celebration ১৮শ -১৯শ শতকে, হাতে লেখা ভালোবাসার চিঠির জায়গা নিল ছাপানো কার্ড। ২০শ শতকে, ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠল চকোলেট, গোলাপ, হীরের আংটি। ভালোবাসায় ক্রমে বানিজ্যের রঙ লাগল, বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সুযোগ বুঝে শুরু করল বাণিজ্যের নতুন খেলা— "ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাইলে উপহার দাও!" ফলস্বরূপ ভ্যালেন্টাইনস ডে মানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি গোলাপ বিক্রি, চকোলেটের পাহাড়, দামি উপহার আর বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার। আজকের দিনে মনের মানুষটির সাথে ভালোবাসায় ভেলায় ভেসে যাওয়ার আগে একবার মনে করে নেবেন ভালোবাসা দিবসের এই ইতিহাস; যার প্রতিটা ইটে প্রাচীন রোমের লুপারকালিয়া উৎসব থেকে শুরু করে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগ, সবটা আজও মিশে আছে।
- মামলেটের জন্মকথা।
দিন বদলের সাথে সাথে কলকাতার ফুটপাতে চাইনিজ, কোরিয়ান, নেপালী, টিবেটিয়ান ক্যুইজিন জায়গা করে নিয়েছে। তবে বাংলার বুকে সময় আর প্রজন্ম যতই বদলাক, বাঙালি রসনায় বা স্ট্রিট ফুড হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিক্রিতে ডিম টোস্ট বা মামলেটের জুড়ি নেই। এই ডিম টোস্টকে কলকাতার ফুটপাতে ফ্রেঞ্চ টোস্ট নামেও বিক্রির চল রয়েছে। যদিও এই খাবারের সঙ্গে ফ্রান্সের কোনো সম্পর্কই নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ আমাদের চায়ের ঠেকের বা মা-কাকিমার রান্নাঘরের ডিম পাউরুটিকে ফ্রান্সের সঙ্গে জোড়া হয়েছে কেন? ঠিক এরই জন্য ওমলেটের আতুঁর ঘরে পৌঁছতে হবে। জানা যায় ইউরোপিয়ানরাই প্রথম ডিম ভাজা করে খাওয়ার পথ প্রদর্শন করেন। French Omelette ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স ডিম ফেটিয়ে তাতে মাংস সিদ্ধ, চিজ, টমেটো,ক্যাপসিকাম বা হ্যাম ব্যবহার করে; সাথে সামান্য ময়দা গুলে প্যানে মিশ্রনটিকে শুইয়ে ধীমে আঁচে মহার্ঘ্য যে বস্তুটি তৈরী হয়, সেটাই ওমলেট। ইতিহাস বলছে, ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সেনাবাহিনী-সহ দক্ষিণ ফ্রান্স দিয়ে যাত্রা করার সময় বেসিয়েরেসের কাছে এক সরাইখানায় জীবনে প্রথম এই পুরু ও সুস্বাদু ওমলেট খেয়েছিলেন। তৃপ্তি সহকারে ওমলেট পেটে চালান করেই সম্রাট আদেশ করলেন, গ্রামের সব বাড়ি থেকে ডিম সংগ্ৰহ করে তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য বিশাল আকারের ওমলেট তৈরি করতে হবে। ইতিহাস সাক্ষী রেখে সে দীর্ঘ ওমলেট তৈরিও হল। তারপর থেকেই ফ্রান্সে ইস্টারে দীর্ঘ ওমলেট খাওয়ার ট্রাডিশন শুরু হয়! এখনও পর্যন্ত বেসিয়েরেস সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ইস্টার সানডেতে তারা ১৫ হাজার ডিম দিয়ে বানায় বিশাল আকৃতির ওমলেট । কয়েকশো মানুষ এই উৎসবে রান্নায় দায়িত্বে থাকেন। আর উৎসবে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিশাল ওমলেটের খানিকটা অংশ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। এছাড়া বেলজিয়ামেও এই উৎসবের আয়োজন হয়। ওমলেটটি সুস্বাদু করতে লবণ, তেল, বাটার, দুধ, চিলি ফ্লেক্স, গোল মরিচ ইত্যাদি অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়। এত এত জিনিসের আয়োজন দেখে মনে হবে এ যেন মহাভারতে পড়া কোনও কোনো মহাযজ্ঞ-এর প্রস্তুতি। Giant Omelette Festival ফিরে আসি বাংলায়। যে বাঙালি একসময় কেবল ভাত-মাছেই তৃপ্তি পেত, সেই বাঙালির জিভ-ই বিংশ শতাব্দীর মাঝখান থেকে নানারকম প্রথাবিরোধী খাবারে মন দিয়েছে। গোটা ভারতে যখন হিন্দুদের মধ্যে ডিম নিয়ে নানা সংস্কার ছিল, তখন কিন্তু শহুরে বাঙালি এসব সংস্কারের ঊর্ধ্বেই থেকেছে। তবে শোনা যায় উচ্চবর্ণের হিন্দুরা হাঁসের ডিম খেলেও মুরগির ডিমে তাঁদের প্রবল আপত্তি ছিল। সময় যত গড়াতে থাকল, ইংরেজি শিক্ষার হাওয়ার বইতে শুরু করল বাঙালি হিন্দু পরিবারের অন্দরমহলে, সংস্কার নামক বস্তুটি ততই ক্রমশ দূর হতে শুরু করল। খাঁটি বৈষ্ণব এমনকি ব্রাহ্মণ বাড়ির জলখাবারে ঢুকতে শুরু করল ডিমের নানা পদ, তা সে ওমলেট হোক বা পোচ। পরে অবশ্য সর্বস্তরের বাঙালি মননে ডিম নিজের আসনটি পাকা করেছে নিজ গুণে। কারণ হিসেবে ‘পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের মধ্যে ডিমই সবচেয়ে সস্তা’ -এটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় । ইওরোপিয়ান দের ডিমের সাদা অংশকে ফেটিয়ে তেল বা মাখনে ভেজে খাওয়ার রেওয়াজই ছিল ডিমের জন্মের উপপাদ্য।কিন্তু বাঙালির রান্নাঘরে ঢুকেই ডিম অন্যরূপ ধারণ করল। কড়াই বা তাওয়ায় ঝাঁঝালো সষের তেলে সাতার কাটার আগে ডিমের সঙ্গে মিশল পেঁয়াজের মিষ্টত্ব আর কাঁচালঙ্কার ঝাল, ওমলেট হল ‘মামলেট’। এই মামলেটের স্বাদ বাঙালি বংশ পরম্পরায় বহন করেছে পান্তা ভাত, গরম খিচুড়ি বা ডালভাতের অনুষঙ্গে। গরম ভাতের সঙ্গী 'মামলেট' এই কিছু বছর আগেও ল্যাম্পপোস্টের নিচে খদ্দেরদের ওমলেট ভেজে দেওয়ার জন্য ডিমের পসরা সাজিয়ে বসতেন কিছু মানুষ। একটা ছোট্ট উনুন, অ্যালুমিনিয়ামের সসপ্যান, মাথায় ফুটো করা এক বোতল সর্ষের তেল, স্টিলের গেলাস, খুন্তি, পেঁয়াজ কুঁচি, লঙ্কা আর নুনের বাটি নিয়ে তাঁরা বসতেন সন্ধের আঁধারে। সুনিপুণ কায়দায় গেলাসের কানায় ডিম ঠুকতেন, ভাঙা ডিমে চটপট মিশিয়ে নিতেন পেঁয়াজ কুচি, কাঁচালঙ্কা আর নুন। মনোনিবেশ করে খুন্তির পেছন দিয়ে ডিম গুলে নেওয়ার পর ডিম ভাজার পর্ব চলত। হাতের দক্ষতায় সসপ্যানে ফুলে ওঠা ডিম শূন্যে ডিগবাজি দিলেই মামলেট খদ্দেরের প্লেটে সস্নেহে পৌঁছে দিতেন বিক্রেতারা। Roadside Tea-Omlette stall এরপর শহরের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের রান্নাঘরে কড়াইয়ের বদলে ঢুকে পড়ল ননস্টিক প্যান। তাতে সর্ষের তেলের বদলে জুড়ে গেল রিফাইন তেল। ওমলেটের রূপ রং গেল বদলে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সেই বিক্রেতারাই মামলেটের সঙ্গে আমদানি করলেন পাউরুটি। দাম একটু বেশি পড়লেও ডিমটোস্টের জন্মলগ্ন থেকে পাশে থাকা সেইসব খদ্দের আজও মুখ ফেরায়নি। বাঙালির জীবনে এখন যতই ফাইভস্টার হোটেলের ইতালিয়ান ওমলেট ফ্রিটাটা বা ফ্রায়েড এগের কদর কদর বাড়ুক, বাঙালি কিন্তু জানে ফ্রায়েড এগ মানেই তাদের সাধের মামলেট নয়। পাড়ার কালিদার চা দোকানে বসে ডিমটোস্ট কিংবা মোটা পুরুষ্ট ওমলেটের স্বাদ নিতে নিতে খবরের কাগজ ওল্টানোর মজাই আলাদা। Egg Toast মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রুগীর অসহায় পরিবার থেকে কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে আসা দূরের জেলার যুবক কিংবা মেসের বাসিন্দা অল্প মাইনে পাওয়া রোগা পাতলা ছাত্রের ভরসা এখনও ডিম সেদ্ধ, মামলেট, পোচ বা এগ টোস্ট। ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে ওমলেট, পোচ বা ডিমটোস্ট তাদের সুলভে প্রোটিনের নিরাপত্তার পাশাপাশি এই বড় শহরে হারিয়ে না যাওয়ার ভরসা জোগায়।
- রেবা রক্ষিত : স্মৃতির অতলে থাকা সার্কাস সম্রাজ্ঞী
শহর কলকাতায় শীত একটু একটু করে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। বাঙালির শীতকাল মানেই বোরোলীন-পাটালী-কমলালেবু-পিকনিক-চিড়িয়াখানা আর সার্কাস! সার্কাস বলতেই মনে পড়ে ছিপছিপে বিদেশী তরুনীর দল আর জন্তু-জানোয়ার নিয়ে অদ্ভুত সব খেলা। কিন্তু যদি বলি এমন বাঙালী রমনী বিস্তৃতির অতলে আছেন, যিনি স্বাধীনতারও আগে হয়ে উঠেছিলেন সার্কাসের আইকন- শুনবেন তার গল্প ? ১৯৩০ সালে অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লায় ‘অনিমা রক্ষিত’-এর জন্ম। স্কুলে যখন পড়তেন, সেই সময়েই কুমিল্লা থেকে কলকাতায় এসে ওঠে তাঁর পরিবার। খেলাধুলো, শরীরচর্চা, দৌড়, সাঁতার কাটা, গাছে চড়া ইত্যাদি কাজে-কর্মে তাঁর অফুরান উৎসাহ ছিল সেই ছোটোবেলা থেকেই। বাড়ির অমতেই একপ্রকার জেদ ধরে কলকাতায় জাতীয় ‘ক্রীড়া ও শক্তি সংঘ’ নামের একটি যোগচর্চা কেন্দ্রে ভর্তি হন অনিমা। ওই ছোট বয়সেই এই সংঘের কর্ণধার শম্ভু মল্লিকের সঙ্গে নানা জায়গায় ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতেন তিনি। এগারো বছর বয়সে পুরোপুরি শরীরচর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য শম্ভু মল্লিকের সংঘ থেকে রেবা রক্ষিত চলে আসেন বিষ্টু ঘোষের কুস্তির আখড়ায়। তাঁর কাছে আসন আর যোগাভ্যাসের পাঠ নেন; একই সময়ে বিষ্ণুচরণ ঘোষের কাছে পেশি ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের খেলা শিখে নেন তিনি। সেই সময়েই যোগাভ্যাসের পাশাপাশি প্রাণায়ামের পাঠও রপ্ত করেছিলেন। অনিমার আগ্রহ ও উৎসাহ দেখে বিষ্টু ঘোষ নিজেই এক সার্কাসের মালিকের সঙ্গে কথা বলে শোয়ের বন্দোবস্ত করে দেন। সার্কাসের জগতে এসে অনিমা রক্ষিত হয়ে গেলেন ‘রেবা রক্ষিত’ সেই শুরু হল রেবার পথচলা। স্বাধীনতার দুই বছর আগে, সার্কাসের একটা ম্যাটিনি শো-তে বুকের উপর দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে এক দুঃসাহসিক নজির তৈরি করেছিলেন রেবা রক্ষিত।বুকের উপর মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেওয়ার এই মারণ খেলা তাঁকে ক্রমে আরও জনপ্রিয়তা দিলো। শুনলে আশ্চর্য হতে হয়, তাঁর বয়স তখন মাত্র পনেরো-ষোলো বছর। নির্ভীক এই বঙ্গমহিলার কাণ্ড দেখে দর্শকরা ভয়ে চোখ বুজে ফেলতেন সেই সময় আর সেটাই ছিল তাঁর শোয়ের বিশেষত্ব। এমনই এক সন্ধ্যায় ঘটল দুর্ঘটনা। দর্শক আসন তখন কানায় কানায় পূর্ণ। রেবা রক্ষিত মঞ্চে টানটান শুয়ে তৈরি। আর তারপরেই বাইকের ভারী সামনের চাকাটা চলে গেল তার উপর দিয়ে রোজকার মতই। কিন্তু রেবা টের পাননি, বিপদ সেদিন তার পিছু নিয়েছিল। পিছনের চাকাটা ওঠার পরেই মুখের কাছে প্রচণ্ড জোরে আঘাত পান রেবা, চোখে মুখে তখন অন্ধকার দেখছেন। গালে বসে গেল টায়ারের কালো দাগ। টানা দু মাস দগদগে ছিল সেই দাগ। সেই দুর্ঘটনায় রেবার প্রাণসংশয় হলেও রেবা ফিরে এলেন। দমে যাওয়ার পাত্রী তিনি নন, তবে মোটর সাইকেলের খেলাকে এবার বিদায় জানানোর পালা। মোটর সাইকেলের পরে এবার শুরু হল বুকে হাতি তোলার খেলা। তখন পঞ্চাশের দশক। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশে তখন সাড়া ফেলেছিল প্রিয়নাথ বসুর গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের দারুণ সব খেলা। শুধু তাই নয়, প্রিয়নাথ বসুর অনুসরণে আরও বেশ কিছু সার্কাসের দল গড়ে উঠলো ভারতে। সমস্ত দেশ জুড়ে তখন এই সার্কাসগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে নিত্য নতুন খেলা দেখানোর। ট্রায়াল শো-তে পঞ্চাশ-ষাট মণ ওজনের বাচ্চা হাতি রেবা অনায়াসে বুকে তুলে নিলেন। অবশেষে চূড়ান্ত শো, পূর্ণবয়স্ক একটি হাতি সেদিন অনায়াসে রেবার বুকের উপর দিয়ে হেঁটে চলে যায়, রেবা তখনও অক্ষত এবং প্রাণোচ্ছ্বল। এরপরই নানা সার্কাস থেকে ডাক আসতে থাকলো। রেবা ক্রমান্বয়ে দেখাতে শুরু করলেন তাঁর হাতির খেলা। শো-পিছু উপার্জনও হতে লাগলো ভালোই। সেকালের হিসেবে শনিবার কিংবা রবিবারের প্রতি শো-পিছু ২০০ থেকে ২৫০ টাকা উপার্জন করতেন রেবা। এই খেলাই সমগ্র ভারতে তাঁকে সার্কাসের সম্রাজ্ঞী বানিয়ে তুলেছিল। গ্রেট বম্বে সার্কাসে টানা আট বছর এই হাতির খেলা দেখিয়েছেন তিনি। বুকের উপর পেতে রাখা কাঠের তক্তা দিয়ে হাতি হেঁটে চলে যেত। রেবা নির্বিকার শুয়ে থাকতেন, পরে কাঠের তক্তা সরানো হলে উঠে আসতেন হাসিমুখে। ইন্টারন্যাশনাল সার্কাসের হয়ে শেষবারের মতো খেলা দেখিয়েছিলেন এই বাঙালি কন্যা। ১৯৫৫ সালে ‘মিস বেঙ্গল’ হন রেবা, ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে। সুদূর আমেরিকার Ida Jo Pajunen সম্প্রতি রেবা’কে নিয়ে লিখেছেন Strong Woman Reba Rakshit: The Life and Adventures of a Stuntmaster. তবে বাঙালির স্মৃতির পাতায় ‘রেবা রক্ষিত’ অনুজ্জ্বল এক ক্ষীণ জ্যোতিষ্কের মতোই অনালোচিত থেকে গিয়েছেন আজও। রেবা রক্ষিত কেন বিশেষ: হাতির মতো ভারী প্রাণীকে বুকে তুলে ধরে রাখার জন্য অসাধারণ শারীরিক শক্তির প্রয়োজন। রেবা অবশ্যই সেই শক্তির অধিকারী ছিলেন। তবে শুধু শক্তি বা শারীরিক ক্ষমতা নয়, রেবা রক্ষিত হওয়ার জন্য এই 2024-এও প্রচুর সাহসের প্রয়োজন। আজকের দিনে যখন আমরা নারীশক্তির কথা বলি, তখন রেবা রক্ষিতের মতো মেয়েদের মনে রাখা জরুরি। রেবা সেই কবে দেখিয়ে গিয়েছেন - একজন নারী যদি চায়, তাহলে সে সব কিছু করতে পারে। আজ এই লেখা পড়ে সুকুমার রায়ের লেখা ‘পালোয়ান’ নামের ছড়ার সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তি - ‘খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ, হাতি লোফেন যখন তখন / দেহের ওজন উনিশটি মণ, শক্ত যেন লোহার গঠন’ শুনে বা পড়ে আপনার মনে যদি গোফওয়ালা কোনও পালোয়ান পুরুষ এর পাশাপাশি পঞ্চাশের দশকের কোনও বাঙালি রমনীর অবয়ব মনে পড়ে তাহলেই এই লেখা সার্থক।
- বাংলা সংবাদপত্রে প্রথম পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন।
কান পাতলেই চারিদিকে এখন সানাইয়ের সুর। আগামী ১২ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে ৪৮ লক্ষ বিয়ের আসর বসবে। তা থেকে ৬ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে ধারণা। গত বছর এই সময়ে ৩৫ লক্ষ বিয়ের আসর বসেছিল। তাতে বাণিজ্য হয়েছিল ৪.২৫ লক্ষ কোটি টাকার। কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স(সিএআইটি) এই তথ্য জানিয়েছে। ঠিক এরই হাত ধরে বিয়ের বিজ্ঞাপন-এর বাজারটিও নেহাত মন্দ নয়। এই প্রেম বা রাইট সোয়াইপ এর রমরমা বাজারেও পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন কিন্তু তার গরিমা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে চলেছে,; সে ছাপার অক্ষরই হোক বা ডিজিটাল ফন্ট-এ। মূলত খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনই অনেকের কাছে পছন্দের পাত্র-পাত্রী খোঁজার অন্যতম হটস্পট। কিন্তু এর শুরু কোথায়? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে দেড়শো বছর! সালটা ১৮৭১, তারিখ ১১ জুলাই - তৎকালীন বাংলার একটি সংবাদপত্র ‘এক্সচেঞ্জ গেজেট’-এ বেরোল একটি বিশেষ বিজ্ঞাপন। ‘বিবাহ’ শিরোনামের সেই বিজ্ঞাপন ছিল এইরকম - ‘একজন কর্মচারী যিনি ২০ বৎসর কর্মকার্য করিয়াছেন, এখন তাঁহার বিবাহ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে তিনি এমন একটি কনে চান যাহার বয়স ২৫ বৎসরের অধিক নহে এবং সংসারের কাজকর্মে বিশেষ নিপুণ। টাকাকড়ির প্রয়োজন নাই। বর বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে আছেন। কনেরা দরখাস্তের সঙ্গে যেন নিজ নিজ চেহারার ছবি পাঠাইয়া দেন। যাঁহার চেহারা পছন্দ না হইবে তাঁহার চেহারা [ছবি] ফিরাইয়া দেওয়া যাইবেক। কনেরা ও কে নামে শিরোনাম দিয়া, 'এক্সচেঞ্জ গেজেট' ছাপখানায় অধ্যক্ষের নিকট দরখাস্ত পাঠাইয়া দিবেন।’ ইতিহাস বলছে, বাংলা সংবাদপত্রে এটিই প্রথম পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন। এখনকার সময় কালের নিরিখে আপাত সাধারন ঘটনা মনে হলেও সেই সময় এই বিজ্ঞাপণ রীতিমত শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করতে চাওয়ার এই ‘অনাচার’ দেখে রক্ষণশীল সমাজ জেগে উঠল, রে রে করে তেড়ে এল বঙ্গসমাজ। এমনকি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেন অন্যান্য কাগজের সম্পাদকরাও। ‘সুলভ সমাচার’ পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়— ‘খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়া লোকে তো ঘর বাড়ি গাড়ি ঘোড়াই কিনিয়া থাকে কিন্তু বিজ্ঞাপন দ্বারা কিরূপে বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইতে পারে? এমন বিবাহের চেয়ে আইবুড়ো থাকা ভাল…’। সাহেবি শিক্ষা এবং ইংরেজি শিক্ষাকেও কাঠগড়ায় তোলে তখনকার বঙ্গ সমাজ। এতে যে ‘সংসারে সুখ পাওয়া যায় না’,সেই কথাও ঘোষণা করে বলা হয়। তখন সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মানতে না চাইলেও ১৮৭১ সালের সেই বিজ্ঞাপন তখনকার প্রচলিত অনেক ধারণাকেই ভেঙে দিয়েছিল। শুরুটা যেমনই হোক না কেন আজকের প্রযুক্তির বিভিন্ন মারপ্যাঁচের যুগেও খবরের কাগজের সেই সনাতন পদ্ধতি্র ‘পাত্র-পাত্রী চাই’ আজও চার হাত এক করার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। তথ্য ঋণ – কলির শহর কলকাতা / হরিপদ ভৌমিক
- 'আমাকে ভাড়া করুন, আমার কোনও কাজ নেই'।
শোজি মোরিমোতো। জাপানের এই যুবকের বয়স উনচল্লিশ, ছিপছিপে লম্বা চেহারা, সাধারনের ভীড়ে তিনি একাকার। কিন্তু এই শোজি ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতার জোয়ারে ভেসে জনপ্রিয়তার তীরে এসে সাড়া ফেলে দিয়েছেন, বদলে দিয়েছেন সফলতার সংজ্ঞা। কলেজ থেকে পাশ করে বেরোনোর পরে কিছুদিন তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করেছিলেন। কোনও কারণে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বিদায়ের সময় প্রকাশনা সংস্থার উদ্ধত মালিক শিজোকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তুমি থাকলে না গেলে তাতে আমাদের কিছুই যায় আসবে না। শোজি কোনও জবাব দিতে পারেননি, মনে মনে দুঃখ পেয়েছিলেন। দীর্ঘমেয়াদি বা ভদ্রস্থ কোনও কাজের সুযোগ যখন কিছুতেই জুটছে না, ২০১৮ সালে শোজি একটা টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে এক লাইনের একটি আবেদন ছড়িয়ে দিলেন ওয়েব দুনিয়ায় - ‘ "Do Nothing Rent-a-Man" ।এখন সেই অ্যাকাউন্ট-এ কয়েক লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে। চার হাজারের বেশী জাপানি পুরুষ এবং নারী, শোজির এই ডাকে সাড়া দিয়েছেন। গোড়ার দিকে দাতব্য করলেও পসার জমার পরে তিনি গ্রাহকদের থেকে ১০ হাজার ইয়েন (প্রায় ৭০০০ টাকা) নেন শোজি। এছাড়াও, যাতায়াত ও খাবার খরচ আলাদাভাবে নেওয়া হয়। গত বছর প্রকাশিত রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ৪ বছরে মোরিমোতো ৪ হাজারেরও বেশি ক্লায়েন্টকে ‘পেইড সিটিং’ দিয়ে উপার্জন করেছেন। ক্লায়েন্টদের মধ্যে একজন ব্যক্তি প্রায় ২৭০ বার মরিমোটোকে ‘ভাড়া’ করেছেন তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। মোরিমোতো জানিয়েছেন যে, তাঁর বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট শুধুমাত্র মাইক্রো-ব্লগিং সাইটে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁকে ‘ভাড়া’ করেছেন। শোজি তার এই বিচিত্র পেশা বর্ণনা করেছেন তার লেখা বই ‘ Rental Person, who does nothing ’- এ। নানা জনে নানা কারণে ডেকে নেয় শোজিকে। কোনও বাড়িতে হয়ত কোনও খেলার জন্য একজন কম পড়েছে, শোজির ডাক পড়ল। তবে বেশিরভাগ ডাকেরই উদ্দেশ্য সঙ্গ লাভ। এলাকা ছেড়ে কোনও পরিবার হয়ত দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে শোজি গিয়ে তাদের বিদায় জানিয়ে এলেন। বনিবনা না হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী যাচ্ছেন ডিভোর্স দিতে, শোজি তাদের সহযাত্রী। এক যুবতী কবুল করেছেন তিনি বিভিন্ন দরকারে অন্তত দশবার মোরিমোতোকে ডেকে নিয়েছেন। হয়তো কোনও অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে প্রথমবার দেখা করতে গিয়েছেন, পাশে বসিয়ে রেখেছেন ভাড়া করা সঙ্গীটিকে। হয়তো কোনও দিন তার মনে হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদি গোপন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান, বন্ধুদের কারও কাছে মুখ খোলা যাবে না, নির্বাক শ্রোতার দায়িত্ব পালন করবেন শোজি। একজনের বক্তব্য, ‘হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন ধরে গড়িমসি করছিলাম, শোজি সঙ্গ দেওয়ায় আমার দ্বিধা কেটে গিয়েছিল।’ একবার এক মক্কেল তাকে বুক করেছিলেন নিজের সঙ্গে একটি খেলার পার্কে গিয়ে স্রেফ ঢেঁকি চড়ার জন্য! দুই সন্তানের পিতা শোজি আরও জানিয়েছেন, যে কিছু লোক তাঁকে ঘর পরিষ্কার করতে, কাপড় ধুতে, নগ্ন হতে, বন্ধু হতে বলে। তবে শোজি এ ধরনের কাজ একেবারেই করেন না। অর্থাৎ, তিনি পেশাদারদের মতোই মানুষের সঙ্গে শুধু কথা বলেন। একাকীত্বের সমস্যা এখন ভুবন জুড়ে, অনেকের কাছেই বিরতিহীন নিঃসঙ্গতা যেন গলায় দড়ির ফাঁস। এমন সময়ে কেউ যদি নীরব সঙ্গ দিতে আসে, নিজে চুপ থেকে অন্যের কথা মন দিয়ে শোনে তাকে তো মানুষ স্বাগত জানাবেই। শিজো মোরিমোতোর কাহিনী জানান দিচ্ছে, এমন ‘ডু নাথিং’ সঙ্গদানেরও একটা চাহিদা আছে। শোজি মোরিমোতো মনে করেন যখন কেউ কিছু করতে চাইছে তখন তাকে সাপোর্ট করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাটি হল, স্রেফ তাদের পাশে থাকা। আসলে কিছু না করাটাও এক ধরনের সমর্থন। মানুষের অসহায় নিঃসঙ্গতাবোধে আরামের মলম হওয়ার বা নিজেকে ভাড়া দেওয়ার শোজি মোরিমোতোর এই যে বিচিত্র পেশা তা নিঃসন্দেহে অনন্য ।
- জর্জ ম্যালরি এবং অরভিন: এভারেস্টের অজানা ইতিহাস
এভারেস্টকে বলা হয় পৃথিবীর তৃতীয় মেরু। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই পৃথিবীর দুই মেরুতে মানুষ তার পায়ের ছাপ ফেলেছিল; বাকি ছিল শুধু এভারেস্ট। এই এভারেস্টের চূড়ায় নিজেদের সাফল্যের চিহ্ন এঁকে দেওয়ার জন্য সবার আগে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশ পর্বতারোহীরা। সাল ১৯২১ বলাই বাহুল্য বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯২১ সালে এভারেস্টের চূড়া জয়ের প্রথম পরীক্ষামূলক চেষ্টাটি করেছিলেন ব্রিটিশ পর্বাতোরহী-রা। এই পরীক্ষামূলক অভিযানের একজন সদস্য ছিলেন ইংল্যান্ডের মবেরিতে ১৮৮৬ সালে জন্ম নেওয়া জর্জ ম্যালরি। এই অভিযানে তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার রাস্তা আবিষ্কার করেছিলেন জর্জ ম্যালরি এবং গাই বুলক। যেহেতু এভারেস্ট জয় করতেই হবে এমন কোনো পরিকল্পনা সেবার ছিল না, বরং পরীক্ষামূলক অভিযান ছিল, তাই সেইবারে তারা নর্থ কোল এর বেশি উপরে উঠতে পারেন নি। সাল ১৯২২ রাস্তা আবিষ্কার হওয়ায়, এবার চূড়ায় ওঠার নেশাও আগের চাইতে বেড়ে গেল। ফলে এর পরের বছর ১৯২২ সালেই আরেকটি অভিযান চালানো হয়েছিল, যা ছিল এভারেস্ট জয়ের সর্বপ্রথম পরিকল্পিত অভিযান।এই অভিযানের সাথেও যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ পর্বতারোহী ম্যালরি। দুর্ভাগ্যবশত এই অভিযানে ৭ জন শেরপা তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যান। ব্যর্থ মন নিয়ে এভারেস্টের চূড়ার অনেকটা কাছ থেকে ফিরে আসেন ম্যালরি সহ বাকি দল। ম্যালরি ধরেও নিয়েছিলেন তাঁর হয়তো আর এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা হবে না। ইতোমধ্যে বয়স এসে ঠেকেছে ৩৫-এ এবং ৩ সন্তানের জনক হয়েছেন তিনি। কিন্তু এভারেস্টের নেশা তাঁকে আর ছাড়ে না। যে করেই হোক এভারেস্ট জয় করতেই হবে- এই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। সাল ১৯২৪ এভারেস্ট জয়ের অদম্য ইচ্ছা নিয়ে আবারো অভিযানের পরিকল্পনা করলেন জর্জ ম্যালরি। তাকে এই অভিযানের পরিকল্পনা করতে দেখে বেশ মুষড়ে পড়লেন ম্যালরির স্ত্রী রুথ। সন্তান এবং পরিবারের কথা বলে স্ত্রী তাঁকে বোঝাতে চাইলেন যে পরিবারের পাশে, সন্তানদের পাশে তাঁকে খুব প্রয়োজন। কিন্তু ম্যালরি যে সেই কবে থেকেই এভারেস্টকে মন দিয়েছেন; তাই তাঁকে আটকানো গেল না। স্ত্রীকে কথা দিলেন,‘ যদি এভারেস্ট জয় করতে পারি তাহলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় তোমার একটা ছবি রেখে আসব’। স্ত্রীকে দেওয়া এই প্রতিশ্রুতিই পরবর্তীতে গোটা পৃথিবীর মানুষকে নিয়ে গেছে এক গভীর রহস্যের অন্তরালে। সেবার এভারেস্ট অভিযানের যাওয়ার আগে থেকেই নিউ ইয়র্কে ম্যালরিকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে ম্যালরিকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল, এবং এর উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন, তা মানব ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত একটি উক্তি। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি কেন মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে চান? এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, - ‘বিকজ ইটস দেয়ার!’ সাল - ১৯২৪ স্থান- এভারেস্ট বেস ক্যাম্প। অবশেষে ৩৭ বছর বয়সী জর্জ ম্যালরি যাত্রা শুরু করলেন এভারেস্টের দিকে। এবার সঙ্গী, ২২ বছর বয়সী অরভিন। ১৯২৪ সালের এই অভিযানের প্রথম দুটি প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ করতে পারেননি তারা। এদিকে জুন মাস, আসছে মৌসুমি আবহাওয়া। এখানে দেরি করা সম্ভব নয়। সম্ভবত এখান থেকেই স্ত্রীকে শেষবারের মতো চিঠি পাঠিয়েছিলেন জর্জ। লিখেছিলেন, “বর্ষাকাল এগিয়ে আসছে। এর পর আর ওঠার সুযোগ পাবো কি না জানি না। আমি এখানে পড়ে থাকতে চাই না। পরশুদিন আমরা যাত্রা শুরু করতে চাই।” এরপর এই দুজন এভারেস্ট জয়ের পণ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অভিযান শুরু করেন। ৪ জুন তারা দুজন অ্যাডভান্স বেসক্যাম্প থেকে রওনা করে পরের তিন দিনে ৬ নাম্বার বেস ক্যাম্পে পৌঁছ্লেন। এর পরদিন ৮-ই জুন দুজন ৬ নং বেসক্যাম্প থেকে রওনা করে সেদিন দুপুরের মধ্যে চূড়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন । সেই শেষবারের মতো তাদের দেখা গিয়েছিল ৮,৬০০ মিটার উচ্চতায়। এখান থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেনীর চূড়া আর মাত্র আড়াইশো মিটার। এই পর্যন্ত পড়ে আপনার মনেও আমার মত প্রশ্ন জাগতে পারে, তারা কি পেরেছিলেন শেষ পর্যন্ত? তাদের এই অন্তর্ধান পর্বতারোহণের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্যের জন্ম দিয়েছে, যার উত্তর আজও অজানা। সাল ১৯৫৩ এর ২৯ বছর পর ১৯৫৩ সালের ২৯ শে মে নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারির সাথে, নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। সাল ১৯৯৯ ১৯৭৫ সালের এক এভারেস্ট অভিযানে একজন চীনা পর্বতারোহী একজন ইংরেজের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছেন বলে জানান। এর আগে ১৯৩০ সালের এক অভিযানে অরভিনের আইস এক্স খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ৮,৪৪০ ফুট উচ্চতায়। এরপর ১৯৯১ সালের এক অভিযানে ১৯২০ সালের অভিযানে ব্যবহৃত অক্সিজেন ক্যানিস্টারও খুঁজে পেয়েছিল একটি অভিযাত্রী দল। এভাবেই ছোট ছোট কিছু নমুনা পাওয়া যাওয়াতে ১৯৯৯ সালে শুধুমাত্র এই দুজনকে খুঁজতে একটি আলাদা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ম্যালোরি এবং অরভিনের মৃতদেহ এবং তাদের ক্যামেরা খুঁজে বের করা। কারণ, যদি ক্যামেরাটি খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো সেখান থেকে জানা যেতে পারে তারা আসলে সর্বপ্রথম এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখতে পেরেছিলেন কি না। ১৯৯৯ সালের এই অভিযানে অরভিনের মৃতদেহ বা তাঁর কোডাক ক্যামেরার কোনোটিই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল জর্জ ম্যালরির মৃতদেহ। বেসক্যাম্প থেকে সাথে নিয়ে যাওয়া সবকিছু ম্যালরির পোষাকের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছিল। শুধু ছিল না তাঁর স্ত্রীর ছবি, যে ছবিটি তিনি এভারেস্টের চূড়ায় রেখে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী-কে। এরপর রহস্য আরও ঘনীভুত হয়। প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি তিনি সেই ছবি এভারেস্টের চূড়ায় রেখে এসেছিলেন আর নেমে আসার সময় তুষার ঝড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছিল? এই অভিযানে ম্যালরির স্নো গগলসটিও পাওয়া গিয়েছিল তার জামার পকেটে। চোখের স্নো গগলস পকেটে থাকার কারণে তাদের এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার সম্ভাবনাও আর দৃঢ় হয়ে উঠে। ধারণা করা হয়, শেষবার তাদেরকে যেখানে দেখা গিয়েছিল সেখান থেকে চূড়ায় উঠতে গেলে সন্ধ্যার আগেই উঠে যাওয়া সম্ভব ছিল। অর্থাৎ তারা চূড়ায় উঠেই স্নো গগলস খুলে পকেটে রেখেছিলেন এবং এভারেস্টের শিখর থেকে সন্ধ্যায় নামার সময়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সাল ২০২৪ আজ থেকে ঠিক দুই মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে মাউন্ট এভারেস্টের উত্তর মুখের নীচে, সেন্ট্রাল রংবুক গ্লেসিয়ারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, পরিচালক জিমি চিন- এর নেতৃত্বে National Geographic চ্যানেলের চলচ্চিত্র দল শ্যুট করতে গিয়ে বরফের নিচে একটা অদ্ভুদ দর্শন জিনিস দেখতে পায়। কাছে যেতেই তারা বুঝতে পারে, জিনিসটা আসলে একটি জুতো-মোজা পরা পা! জুতোটি্র চামড়া ঘষা, এবং মোজাটিতে একটি লাল লেবেল লাগানো, যার উপর সেলাই করা একটি নাম - A.C. IRVINE ! ১০০ বছর ! জর্জ ম্যালোরির সাথে অদৃশ্য হওয়ার পর তন্ন তন্ন করে খোঁজা হলেও সেই দুর্ঘটনার ১০০ বছর পর এই প্রথম অ্যান্ড্রু কমিন আরভিনের দেহের কোনও অংশ পাওয়া গেল হিমালয়ের বুকে। আরভিন এবং ম্যালোরিকে শেষবার দেখা গিয়েছিল ৮ জুন, ১৯২৪-এ, এভারেস্টের চুড়ার খুব কাছাকাছি। তারা শিখরে পৌঁছতে পেরেছিলেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তর আজও রহস্যে মোড়া। ম্যালোরিরা যদি সফল হতেন, তবে তাদের কীর্তি তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারির এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছানোর ২৯ বছর আগে হত। ম্যালোরির খুঁজে পাওয়া দেহ তাদের দুইজনের শেষ পরিনতি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, কিন্তু দুটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নের উত্তর এতদিন পাওয়া যায়নি - ১। আরভিন শেষ সময়ে কোথায় ছিলেন? ২। তাদের জুটি কি শেষ পর্যন্ত শিখরে পৌছেছিল? পর্বতারোহী এবং ইতিহাসবিদরা দীর্ঘদিন ধরে ভেবেছিলেন যে প্রথম প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয়টি সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতে পারবে। এখন হিমালয়ের বুকে দীর্ঘকাল নিভৃত শয়ানে থাকা এই ‘জুতো-মোজা পরা পা’ আশা জাগাচ্ছে যে ১৯২৪ সালে এভারেস্টের বুকে ঠিক কী ঘটেছিল এবার হয়ত তার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে । আমরা যারা রোজ হেরে যেতে যেতে ক্লান্ত, তাদের জন্য রহস্যময় পর্বতশ্রেনীর বুকে এই নতুন আবিস্কার যেন টাটকা ফুলের সুবাস। এই আবিস্কার আমাদের কাছে হার না মানার এক আবেদন পত্র।
- পিন্টু পোহান - বাংলা সাহিত্যের এক নিরলস পুজারী।
দারিদ্র্য, অনাহার, অপুষ্টি, অমানুষিক পরিশ্রম এবং বাংলা সাহিত্য―আশৈশব সঙ্গী তাঁর। তিনি শুধুমাত্র মাটি থেকে উঠে আসা নয়, মাটি দিয়েই যেন গড়া একজন মানুষ। অনাহার ও দারিদ্রের দাপটে তিনি খড়কুটোর মত উড়ে যেতেই পারতেন, কিন্তু শৈশবেই যিনি বইকে আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাকে ছারখার করার সাধ্য কার! তিনি পিন্টু পোহান । পূর্ণচন্দ্র পোহান ও উজ্জ্বলা দেবীর পাঁচ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। লেখক পিন্টু পোহানের জন্ম ১৯৭৮-এ। বেহালা চৌরাস্তার মদনমোহনতলায়। পড়ার সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলনা; তাই ছোট থেকেই কখনও বন্ধুর বাড়িতে আবার কখনও ঠোঙা তৈরির কাগজ কেনার অছিলায় কালোয়ারের দোকানে ছুটতেন বইয়ের খোঁজে। মাঠে মাঠে গোবর কুড়ানো আর জলায় নেমে শাকপাতা তোলা ছেলেটার মেধার পরিচয় প্রথম পেয়েছিলেন বড়িশা শশীভূষণ জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা ও তাঁর সহপাঠীরা। না,পরীক্ষায় প্রথম হননি, কিন্তু এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকত তাঁর নাম। অথচ আর্থিক কারণে বারবার বিঘ্নিত হয়েছে তাঁর পড়াশোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি ইলেকট্রিকের কাজ, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ, রাস্তার ধারে ফুলের দোকান দেওয়া, বাজারে মাছ বিক্রি করা, কাপড়ের দোকানে কাজ, মেলায় মেলায় খাবারের স্টল দেওয়া, গ্রিল মিস্ত্রির হেলপার, সেলসম্যানের কাজ– অনেক কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নামতে হয়েছে কঠিন লড়াইতে। তবুও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় বরাবরের জন্য ইতি টেনে বেহালা চৌরাস্তার মদনমোহন তলায় তাঁকে দিতে হয়েছিল ছোট্ট একটি পানের গুমটি। সেটা ১৯৯৮ সাল। তারপর দেখতে দেখতে আজ ২৬ টা বছর পার। না। দারিদ্র তাকে দমাতে পারেনি, থাবা বসাতে পারেনি তার সাহিত্য প্রেমে। পিন্টু পোহান ইতিমধ্যেই ফুটপাতের এই পানের গুমটিতে বসেই ১২টা উপন্যাস লিখে ফেলেছেন। এই ফুটপাতে বসেই তিনি লিখেছেন ২০০-র ও বেশি গল্প, ২০০-র ও বেশি কবিতা। তাছাড়া অসংখ্য ছোট ও বড় গদ্য। সব মিলিয়ে তাঁর ‘প্রকাশিত’ লেখার সংখ্যা ২০০০-এরও বেশি। আর এই সবই তিনি লিখেছেন ফুটপাতে তার পানের গুমটিতে বসে- পান সাজতে সাজতে, খদ্দের সামলাতে সামলাতে একটানা ২৫ বছর ধরে। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা, আনন্দমেলা, সানন্দা, দেশ, চিরসবুজ লেখা, নবকল্লোল, শুকতারা, বর্তমান, প্রতিদিন, সাপ্তাহিক বর্তমান, শিলাদিত্য, কৃত্তিবাসের মতো বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। তিনি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস― পঁচিশ বছর ধরে ফুটপাতে ছোট্ট একটা টিনের গুমটিতে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি সহ্য করে একটানা সাহিত্য রচনা করে। শুধু তাই নয়, পঁচিশ বছর ধরে বাজারের হাজারো মানুষের কোলাহল, গাড়ির হর্ণ, যানজটের চিৎকার উপেক্ষা করে সাহিত্যকে ভালোবেসে ফুটপাতে পান-বিড়ি-তামাক-সিগারেটের প্যাকেটের পাশে বসে দেশ-বিদেশের সাহিত্য পাঠে মগ্ন থেকে। শুধুমাত্র বইকে ভালোবেসে এই ফুটপাতে বসেই পড়াশোনা করে প্রথমে ব্যাচেলার ডিগ্রি ও তারপর মাস্টার ডিগ্রি করে। পঁচিশ বছর ধরে ফুটপাতে বসে লুম্পেনদের অত্যাচার, বাবুদের ব্যঙ্গবিদ্রুপ, অবুঝদের উদাসীনতা আর চরম দারিদ্র্য ও অভাব-অনটন সহ্য করেও একটানা লেখা ও পড়ার মধ্যে ডুবে থেকে। উৎসাহ দেওয়ার লোক নেই, কারোর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস নেই, সাহিত্য তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তাও জানা নেই, পিনটু পোহান তবুও পঁচিশ বছর ধরে সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন; করে চলেছেন মা সরস্বতীর বন্দনা। https://www.amazon.in/Children-Bengali-Story-Combo-Pintu/dp/B091CM5PN5
- এক জাহাজ সফর, যা বদলে দিয়েছিল ভারতবর্ষের ভবিষ্যতের রূপরেখা।
সাল ১৮৯৩, সেপ্টেম্বর মাস, আকাশে চকচকে সোনা রঙের রোদ। সকাল সকাল জাপানের যোকোহামা থেকে ভ্যাংকুভারের উদ্দেশ্যে রওনা হল এক বিশাল বাষ্পীয় জাহাজ, 'এম্প্রেস অফ ইন্ডিয়া'! উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের জল ঘন নীল এবং শান্ত। গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে আনুমানিক আট থেকে দশ দিন। এই সকালেই সেই জাহাজের ডেকে দেখা হল দুই ভারতীয় দিকপালের। এই অকস্মাৎ নিছক সাক্ষাৎ ভারতের ইতিহাসে যে এমন সুগভীর ছাপ ফেলবে তা সেদিন তারা কেউই জানতেন না। ভারতের শিল্প ও ব্যাবসার জগতের অন্যতম দিকপাল জামসেদজি টাটা তখন শিকাাগোর একটি শিল্প প্রদর্শনীতে যাওয়ার পথে জাপানে ছিলেন কিছুদিন, উদ্দেশ্য সেই দেশ থেকে দেশলাই কাঠি আমদানি করা। ঘটনাচক্রে এই সময়ই বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দ-ও জাপানে একই হোটেলে থাকছিলেন শিকাগো যাওয়ার পথে। কিন্তু জাপানে থাকাকালীন আলাপ-আলোচনার সুযোগ না হলেও ‘এম্প্রেস অফ ইন্ডিয়া’র ডেক ও একটি রৌদ্রজ্জ্বল দিন সেই সুযোগ করে দিল। জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে, দুই মহাপুরুষের মধ্যে শুরু হল গভীর আলোচনা। বিবেকানন্দ তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রার অভিজ্ঞতা ভাগ করলেন, জানালেন সেখানে তিনি দেখেছেন কিভাবে উপনিবেশিক শাসক তার fellow ভারতীয়দের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আরও জানালেন, চীনে থাকাকালীন, ক্যান্টনের (গুয়াংজু) বৌদ্ধ মঠে তিনি অনেক সংস্কৃত ও বাংলায় লেখা পান্ডুলিপি দেখেছিলেন। সেই সাক্ষাতে তাঁরা জাপানের প্রযুক্তির অসাধারণ উন্নতি নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা করেন। এদিকে, জামসেদজিও তাঁর উদ্যোগের কথা জানালেন। স্বামিজীকে বললেন তাঁর ভারতে ইস্পাত শিল্পের ভিত্তি স্থাপনের পরিকল্পনার কথা। ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, জামসেদজি এও বলেন যে তিনি এমন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির সন্ধান করছেন যা ভারতকে একটি শক্তিশালী ব্যাবসায়ী দেশ হতে সাহায্য করবে। স্বামিজী তাঁর পরিকল্পনাকে উদবুদ্ধ করলেন এবং জানালেন পশ্চিমের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে ভারতের আধ্যাত্মিকতা এবং মানবিকতাকে একত্রিত করতে পারলে চমৎকার একটি ব্যাপার হবে! তিনি আরও বললেন, জাপান থেকে দেশলাই কাঠি আমদানির বদলে জামসেদজি ভারতেই তা উৎপাদন করা উচিত,যাতে গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য জীবিকা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে তিনি কীভাবে ভারতের আধ্যাত্মিক দর্শনের কথা জগৎকে জানাতে এসেছেন, সে কথাও জানালেন বিবেকানন্দ। (প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি সম্মেলনটি আন্তঃধর্মীয় আলোচনার ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের প্রায় ৫০০০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন।) সময়ের নিয়মে সেই দীর্ঘ আলোচনাও একসময়ে শেষ হল, কিন্তু সেই সাক্ষাৎ জামসেদজি’র হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এরপর তাঁদের আর কখনও দেখা হয়নি । কিন্তু এর পাঁচ বছর পরে অর্থাৎ ১৮৯৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি স্বামী বিবেকানন্দকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। যদিও স্বামী বিবেকানন্দ তখন রামকৃষ্ণ মিশনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর শিষ্যা সিস্টার নিবেদিতাকে জামসেদজির সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠালেন। দুর্ভাগ্যবশত, তাঁদের সেইসময়ের পরিকল্পনা তখনকার ভাইসরয় লর্ড কার্জনের জন্য ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু জামসেদজি তাঁর উদ্দেশ্যে অবিচল রইলেন। ১৮৯৮ সালে, তিনি মাইশোরের দেওয়ান শেষাদ্রি আইয়ার-এর সঙ্গে আলোচনা করে মাইশোরের রাজাকে বোঝাতে সক্ষম হন, এবং রাজা জামশেদজীর গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দিতে রাজি হন। এভাবেই জামসেদজির স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন হয়। ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ' টাটা ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ' পরে ভারতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (আই আই এস সি) রূপান্তরিত হয়। স্বামীজি ১৯০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং জামসেদজি তার ঠিক দুই বছর পরে। তাঁদের সেই স্বপ্ন, যা তাঁরা একসাথে দেখেছিলেন, তা ১৯১১ সালে বাস্তবে রূপায়িত হয়। আজকের দিনে, ISSC ভারতবর্ষের গর্ব এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে একটি। টাটা গ্রুপের পরবর্তী উদ্যোগগুলির মধ্যে ' টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস ' এবং ' টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ 'ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। টাটাগ্রুপ -এর সুনাম ও কর্মকান্ডের সৌরভ আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু ভাবতেও অবাক লাগে এই সবের শুরু ১৩১ বছর আগের সেদিনের সেই জাহাজ সফরে, যা আমাদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে জ্বলজ্বল করছে।
- চোদ্দ শাক ও চোদ্দ প্রদীপ - জেনে নিন আড়ালের কাহিনী।
চারদিকের এই ‘হ্যালোউইন’-এর বাড়বাড়ন্ত যুগেও 'ভূত চতুর্দশী' বাঙালির জীবনের একটি বিশেষ অঙ্গ। এই দিনটি কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং এটি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ, কৃষি এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গেও ওতোপ্রতভাবে জড়িত। ‘চোদ্দো শাক’ খাওয়ার রীতিও, এই উৎসবেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু বিশ্বাস নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক তাৎপর্য। আজ রাতে পুর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে চোদ্দ প্রদীপ উৎসর্গ করার আগে জেনে নিন চোদ্দ প্রদীপ ও চোদ্দ শাকের আড়ালে থাকা প্রচলিত এবং অপ্রচলিত কিছু সত্যি। চোদ্দো শাকের গুরুত্ব: একটি বিশ্লেষণ কৃষি ও পরিবেশ: চোদ্দো শাকের চাষ বাংলার কৃষিব্যাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।ভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত শাকের সহজলভ্যতা পক্ষান্তরে সুন্দর-সুগঠিত কৃষি ব্যবস্থাকেই ইঙ্গিত করে। বলা হয়, এই শাকগুলি মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়; যা পরবর্তী মরশুমের জন্য জমিকে প্রস্তুত করে। স্বাস্থ্য: “চরক সংহিতা” অনুযায়ী কার্তিক হল বাংলার প্রাক-শীত মাস। মৃত্যুর দেবতা যমের বাসস্থানের দিকে যাওয়ার প্রতিটি প্রবেশদ্বার কার্তিকা ঋতু জুড়ে খোলা থাকে। কার্তিক মাসের ঋতু পরিবর্তনের ফলে শরীরে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, যেমন শ্লেষ্মা, অগ্নিবৃদ্ধি ইত্যাদি, চোদ্দো শাক সেগুলি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, লম্বা শীতকালের আগে শরীরকে সুস্থ রাখতে এই শাকগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শুধুমাত্র এই নির্দিষ্ট দিনেই চোদ্দো শাক নয়, বরং মাঝেমধ্যে তা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাই উল্লেখ আছে ‘চরক সংহিতা’-তে। ধর্মীয় বিশ্বাস: এই ঘোর অমাবস্যার দিনে মর্ত্যে আসেন পূর্বপুরুষদের বিদেহী আত্মা। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এই ১৪ পুরুষ , জল, মাটি, বাতাস ও অগ্নির সঙ্গে মিশে রয়েছেন। আর এজন্যেই মূলত মাটির মধ্যে জন্মানো ১৪ টি বিশেষ শাক খেয়ে ১৪ পুরুষদের উৎসর্গ করা হয় ভূত চতুর্দশীর দিনটি। আবার অন্য আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী, চোদ্দ ভুবনের অধীশ্বরী দেবীর উদ্দেশ্যে চোদ্দ শাক খাওয়া হয়। শাক পরিচয় “ওলং কেমুকবাস্তুকং সার্ষপঞ্চ নিম্বং জয়াং। শালিঞ্চিং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ুচীন্তথা। ভন্টাকীং সুনিষণ্ণকং শিবদিনে যদন্তি যে মানবাঃ প্রেতত্বং না যান্তি কার্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।’’ ওপরে কৃত্যকৃত্ব বা রঘুনন্দন- উল্লেখিত শ্লোকটি হল চোদ্দো শাকের নাম ও তত্ত্ব। শ্লোকে উল্লেখিত চোদ্দো শাক হল- ১. ওল ডাঁটা ২. কেউ ৩. বথুয়া ৪. কালকাসুন্দ ৫. সরষে ৬. নিম ৭. জয়ন্তী ৮. শালিঞ্চে বা শিঞ্চে ৯. গুলঞ্চ ১০. পটল বা পলতা ১১. শেলুকা ১২. হিলমোচিকা বা হেলেঞ্চা ১৩. ভাঁট বা ঘেঁটু ১৪. সুনিষণ্ণক বা শুষনি আয়ুর্বেদ মতে ১৪ শাক হল- ১. পালং ২. লাল ৩. সুষণি ৪. কুমড়ো ৫. পাট ৬. মেথি ৭. ধনে ৮. পুঁই ৯. নোটে ১০. মূলো ১১. কলমি ১২. গিমে ১৩. সরষে ১৪. লাউ অথবা হিঞ্চে চোদ্দ প্রদীপের ইতিকথা কেউ বলেন দেবী কালী চামুণ্ডা রূপে ভূত এবং প্রেতাত্মা সঙ্গে নিয়ে ভক্তের বাড়িতে আসেন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে। কারওর মতে এই তিথিতে দৈত্যরাজ বলি পৃথিবীতে পূজা নিতে আসেন, সঙ্গে আসে নানা অশুভ শক্তি, অর্থাৎ ভূত এবং প্রেতাত্মা। অনেকে আবার মনে করেন পূর্বপুরুষের আত্মা এই তিথিতে মর্ত্যলোকে আসেন। তবে সব ক্ষেত্রেই অশুভ শক্তির আগমনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার জন্যই প্রাচীন কালে অগ্নি দেবতাকে পাহারায় রেখে নিশ্চিন্তে নিদ্রায় যেত মর্ত্যবাসী। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে এই বছর চতুর্দশী শুরু : বাংলা: ১৩ কার্তিক, বুধবার। ইংরেজি: ৩০ অক্টোবর, বুধবার। সময়: দুপুর ১টা ১৭ মিনিট। চতুর্দশী শেষ: বাংলা: ১৪ কার্তিক, বৃহস্পতিবার। ইংরেজি: ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। সময়: দুপুর ৩টে ৫৩ মিনিট। ভূত চতুর্দশী, শ্রীশ্রী ধর্মরাজ পূজা। শুভ ভুত চতুর্দশী। আলোয় থাকুন, ভালো থাকুন।
- প্যাট্রিক প্যাটারসন : The Forgotten Prince of Cricket
একবার শচীন টেন্ডুলকারকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনার খেলা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গতি কার ছিল, শোয়েব আখতার নাকি ব্রেট লি? না কি ম্যাকগ্রা? সবাইকে অবাক করে দিয়ে শচীন জানালেন, তার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে গতিধর বোলার ‘প্যাট্রিক প্যাটারসন’! গুঞ্জন শুরু হল, কে এই প্যাট্রিক প্যাটারসন??? উপস্থিত অধিকাংশ সাংবাদিক নামটাই শুনলেন প্রথমবার। ৮০'র দশক ও ৯০'র দশকের প্রথমদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট টিমের উইকেট রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন বর্তমান টিভি ধারাভাষ্যকার জেফ ডুজন। ক্রিকেট প্রেমীরা জানেন সেই সময়টা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল তখন বিশ্বসেরা সব ফাস্ট বোলারদের মিলনমেলা। এন্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফট, ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি এমব্রোস, কোর্টনি ওয়ালসের মতো ইতিহাস সেরা ফাস্ট বোলারদের বিপরীতে উইকেট সামলাতে হয়েছে জেফ ডুজনকে। ডুজনকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, অসংখ্য ফাস্ট বোলারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গতি কার ছিল বলে মনে করেন? মার্শাল নন হোল্ডিং নন গার্নার নন, অবাক হলেও সত্যি জেফ ডুজনের মতেও শ্রেষ্ঠ ফাস্ট বোলার ছিলেন প্যাট্রিক প্যাটারসন! শুধু শচীন কিংবা জেফ ডুজন নন, পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াদাদ, ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক আজহারউদ্দীন, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ ওয়া এদের মতো ক্রিকেট রত্ন যারা প্যাটারসনের বলের সামনে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রায় সকলেরই মত - প্যাটারসনের চেয়ে বেশী গতির ফাস্ট বোলার তারা দেখেননি। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেলেন এই প্যাট্রিক প্যাটারসন? এখনকার গ্ল্যামারাস ক্রিকেট কেন তাকে ভুলে গেল? এইসব প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে ইন্টারনেটের অতলে ডুব দিয়েছিলাম আমরা। ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৮ টি টেস্ট ও ৫৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এই জ্যামাইকান গতিদানব হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বাদ পড়েন। তার পর বিস্ময়করভাবে তিনি যেন সাধারনের ভীড়ে বিলীন হয়ে যান। তার সেইসময়কার সতীর্থ বা পরিবারের সদস্য কেউ তার কোন খবর বলতে পারেন নি অনেকদিন। অনেকে ভেবেছিলেন, তিনি বেঁচে নেই। মাঝে একবার শোনা গেছিল,প্যাটারসন কোন এক পাগলা গারদে আছে। কিন্তু কোথায় তা জানা নেই। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, হয়তো আমেরিকা চলে গেছেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়ার এক টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ অলরাউন্ডার মিডিয়াম পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের পর পর ৪ টি বাউন্সার দিয়েছিলেন। কাজটা সেইসময়ের নিরিখে যথেষ্ট সাহসের ছিল, কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাউন্সার দেয়া শুরু করলে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে টেকাই সমস্যা। সেইদিনের সেই তরুন অলরাউন্ডার, পরে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের মহীরূহ হয়ে ওঠা স্টিভ ওয়ার এই ঘটনাটি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম মুখোরোচক গল্প। কিন্তু এই ঘটনার পরের অংশটি আমরা অনেকেই জানিনা, যার নায়ক ছিলেন এই প্যাটারসন। সেদিন ছিল খেলার চতুর্থ দিন। স্টিভ ওয়-কাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্যাটারসন রেগেমেগে সোজা অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমে হানা দেন। তিনি সেখানে গিয়ে সবাইকে হুমকি দিয়ে আসেন, ‘সবগুলোকে কাল মাঠের মধ্যে খুন করবো বাউন্সার দিয়ে’! হয়েছিলও তাই। প্যাটারসন একাই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ শেষ করে দিয়েছিলেন। সেই ইনিংস-এ তার আগুনে বোলিংয়ের শিকার হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ব্যাটার। ফলস্বরূপ সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া করুণভাবে পরাজিত হয়। বরাবরই মাথা গরম পাগলাটে ধরণের ছিলেন প্যাটারসন। তুলনামূলক বেশি রান দিতেন, তবে মাত্র ৫১.০৯ স্ট্রাইক রেটে বোলিং করে গেছেন যা টেস্ট ক্রিকেটে এক কথায় unmatchable। ব্যাটারদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন তিনি। কিন্তু শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় দল থেকে বহিষ্কৃত হবার পর সেই প্যাটারসন কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেলেন। ক্রিকেট খেলার সাথে আর সম্পর্ক রাখেন নি, সম্পর্ক রাখেন নি পরিবার কিংবা সমাজের সাথেও। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন, কেউ তার খোঁজও নেয় নি। তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও জানেন না তাদের ছেলে কোথায় আছেন, বা আদেও আছে নাকি নেই!! এমন প্রতিভাবান বোলারের এভাবে হারিয়ে যাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। অবশেষে অনেক খোঁজাখুজির পর জ্যামাইকার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০১৭ সালে তাকে খুজে পান Bharat Sundaresan ( এক ভারতীয় সাংবাদিক)। কিন্তু কোথায় সেই গতিদানব প্যাটারসন?এ যে এক কঙ্কালসার বুড়ো! প্যাটারসন একা একটি ঘরের এক পরিত্যক্ত বাড়িতে কোনমতে বেঁচেবর্তে আছেন। পাগল হয়ে যান নি, তবে অনেকটাই স্মৃতিভ্রষ্ট। পেটের ভাত জোগাড়ের তাড়নায় হেন কাজ নেই তিনি করেন না। প্রথমে কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু যখন শুনলেন ৬ বছর ধরে এই তরুণ সাংবাদিক তাকে খুঁজে চলেছেন, তখন কথা বলতে রাজি হলেন। কিন্তু কেন এই স্বেচ্ছানির্বাসন? কিছু কিছু প্রশ্নের কোন উত্তর নেই একসময়ের ত্রাস-এর কাছে। প্যাটারসন প্রায় ভুলেই গেছেন তার সোনালী অতীত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই টেস্টের কথা তিনি আর মনে করতে পারেন না। শুধু এটুকু মনে করতে পারেন সেইসব অসাধারণ উত্তেজনা্র দিন ছিল। ক্ষমার সুরে উপস্থিত সাংবাদিককে বলেন, ২৫ বছর হয়ে গেছে ওসব আমি এখন আর ভালো মনে করতে পারিনা। এমনকি তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গতিধর বোলার ছিলেন শুনে যেন অবাক হলেন। এসব কিছুই তার মনে নেই। তবে কথা বলতে বলতে কিছুটা মনে করার চেষ্টা করলেন। পাকিস্তানে গিয়ে জাভেদ মিয়াদাদকে আউট করেছিলেন, ভারত সফরে এসে বন্ধুত্ব হয়েছিলো আজহারউদ্দীনের সাথে। আজহারের কথা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ও কি এখন কোচিং করায়?’ আজহারের ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি ও রাজনীতিতে প্রবেশের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। টি টুয়েন্টি ক্রিকেট কি? খায় না মাথায় দেয়, এসব নিয়ে তার কোনও আইডিয়াই নেই। শচীন টেন্ডুলকারের কথা একটু একটু মনে আছে। তবে সে যে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান হয়ে গেছে এসব কিছুই তিনি জানেন না। প্যাট্রিক প্যাটারসন এমন এক সময় ক্রিকেট খেলেছেন যখন মাঠে স্পিড মিটার বসানো হতো না। হয়তো ১০০ মাইলের বেশি গতিতেই তিনি বোলিং করেছেন সেইসময়ে। আজ ক্রিকেট মিলিয়ন ডলারের খেলা। একসময় এই খেলায় তেমন টাকা ছিলনা। তবে ভাগ্যের ফেরে সোনার যৌবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেও যাযাবরের মতো জ্যামাইকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুধু দুবেলা খেয়ে পড়ে থাকার জন্য অদম্য লড়াই করতে হচ্ছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গতিদানবকে, যা ভাবলেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
- বুড়ীমার চকোলেট বোমা : এক জীবনযুদ্ধ জয়ের আশ্চর্য রূপকথা ।
কালীপুজা এলে আপামর বাঙালী দুই মা-কে স্মরণ করে। এক হলেন মা কালী স্বয়ং আর আরেকজন ‘বুড়ীমা’। কালীপুজোয় বুড়ীমার চকলেট বোম ফাটায়নি বা দেখেনি এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুরুর কথা সালটা ১৯৪৮, দেশভাগের দগদগে ঘা আর একমাথা দুশ্চিন্তাকে বুকে জড়িয়ে দেশ ছাড়েন অন্নপূর্ণা। দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তাঁর ঠাঁই হল পশ্চিম দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে রিফিউজি ক্যাম্পে। স্বামীকে চিরতরে হারিয়েছেন আগেই। গরিব বিধবার সম্বল বলতে সাহস আর অদম্য জেদ। ছেলে মেয়ে দুটোকে মানুষ করতে হবে যে! গঙ্গারামপুরে বাজারে কিছুদিন সবজি বিক্রী এবং তারপর একজনের থেকে বিড়ি বাঁধা শিখলেন অন্নপূর্ণা। ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়েই বিড়ি বাঁধতে লাগলেন। একটু একটু করে মাথা গোজার একটা জায়গা হল, ছেলের পড়াশোনা, বরানগরে মেয়ের বিয়ে – তাও হল। দিনাজপুর থেকে বেলুড় ১৯৫২-৫৩ সালে গঙ্গারামপুরের পাট চুকিয়ে বেলুড়ে ন’শো টাকায় একটা দোকান কিনলেন অন্নপূর্ণা, টালির একচালা দোকানের সাথেই ছোট্ট একটা থাকার ঘর। ছেলেকে দোকানে বসিয়ে চষে ফেলেন উত্তরপাড়া, সালকিয়া, বড়বাজার। কী ব্যবসা করবেন? কিসে হবে আরেকটু লাভ? সরস্বতীপুজোর আগে পিলখানার যোগেন্দ্র পালের কারখানা থেকে ঠেলাভর্তি করে প্রতিমা নিয়ে এলেন। তখন বেলুড়ে আর কোথাও ঠাকুর তৈরি হত না; কাজেই হাতের কাছে প্রতিমা পেয়ে সবাই ভীড় জমালো অন্নপূর্ণার দোকানে। এরপর দোলের আগে রঙের পসরা, লজেন্স, মণিহারি অনেক কিছুরই অস্থায়ী ব্যাবসা করলেন অন্নপূর্ণা। কিন্তু অন্যের জিনিস বিক্রী করে লাভ কোথায়? তাই অন্নপূর্ণার মন চাইছিল অন্য কিছু। এমন কিছুর ব্যাবসা যা হবে তার নিজের। কিন্তু কি সেই ব্যাবসা? অন্নপূর্ণা হলেন ‘বুড়ীমা’ স্কুলের কাছাকাছি দোকান হওয়ায় বাচ্চা ছেলেমেয়েদের যাতায়াত দোকানে ছিলোই। তাদের মধ্যেই কেউ একদিন বলে বসল, “বুড়ীমা, লজেন্স দাও!” কী বলে ওরা? দোকানে রাখা আয়নাটা সামনে ধরলেন অন্নপূর্ণা। চুলে পাক, শরীরে বয়সের ছাপ। আশ্চর্যভাবে,‘বুড়িমা’ নামটা ছড়িয়ে পড়ল। ছিন্নমূল অন্নপূর্ণা সেই থেকে হয়ে গেলেন ‘বুড়িমা’। বুড়ীমার চকোলেট বোমার জন্মকথা সামনে কালীপুজো। বুড়ীমার ইচ্ছে দোকানে বাজি তুলবেন। এদিকে হাতে টাকা-পয়সাও নেই। একশো টাকা ধার করে তিনি বাজি কিনলেন, কিন্তু বিধি বাম। দোকান ভাঙল পুলিশ, কারণ বাজি বিক্রীর উপযুক্র লাইসেন্স নেই তার। সেসবের যে দরকার হয় বুড়ীমা সেটাও জানতেন না। এর ক’দিন পরেই এক দুপুরে ছেলেকে চমকে দিলেন, “এই দেখ বাজি বিক্রির লাইসেন্স। আর বাজি তৈরির অনুমতিপত্রও!” লাইসেন্স তো হল। কিন্তু কে দেবে কম দামে বাজি? বাঁকড়ায় আলাপ আকবর আলির সঙ্গে। সেখান থেকে বাজি আসতে শুরু করল সাথেই হাতে ধরে শেখালেন— কাকে বলে সোরা, ব্যাটরা, গন্ধক কী রকম দেখতে ইত্যাদি। একসময়ের বিড়ি বাঁধায় সিদ্ধহস্ত বুড়ীমা বাজি তৈরী করতে শুরু করলেন নিজের হাতে। প্রথম মরশুমেই বাজিমাত। সব বিক্রি হয়ে গেল। আকবরের ফর্মুলাতেই তুমুল জনপ্রিয় হল ‘বুড়ীমার চকলেট বোম’। সেই পথ চলা শুরু। দেখতে দেখতে ডানকুনি ও মধ্যমগ্রামে বুড়ীমার বাজির কারখানা তৈরী হল। কারখানার জন্য কিনলেও তালবান্দার জমি বুড়িমা বিলিয়ে দিয়েছিলেন গরিবদের। এক সময় যাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, তিনিই পঞ্চাশটি পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দিলেন। শেষের সেই দিন ১৬/১ পিয়ারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বিরাট বাড়ির সর্বত্র জুড়ে রয়েছেন ১৯৯৫ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা বুড়ীমা। শোনা যায় তাঁর শেষ দিনে বাড়ির সামনে চকোলেট বোমা ফাটিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন কিছু মানুষ। এখন ২০২১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়েছে, বুড়ীমার ছেলে সুমিত ও নাতি সুমনও আতস বাজিতে ঝুঁকেছেন পারিবারিক ব্যাবসা সামলাতে। ‘ছবির লাইনে’ও হাত পাকিয়েছেন তারা কিন্তু অন্নপূর্ণা দাস ওরফে ‘বুড়ীমা’ তার জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার রূপকথা সমেত আজও বাঙ্গালীর হৃদয়ে রয়ে গেছেন কালীপুজার অমাবস্যার রাতের মতই ভালো আর আলোর মিশ্রনে।
- সামনেই শীতকাল, রোজকার ডায়েটে নিজেকে রোগমুক্ত রাখবেন কিভাবে ?
প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি যে সমস্ত শাক সবজি, ফল আমাদের উপহার দেয় সেগুলির স্বাদ যেমন ভালো হয় তেমনই সেই সময়ে শরীরে জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি সেগুলিতে প্রকৃতি সাজিয়ে দেয়। তাই রোগমুক্ত এবং তরতাজা থাকতে মরশুমি ফল এবং শাকসবজি আমাদের রোজকার ডায়েটে অপরিহার্য। আসুন আগাম শীতকালের জন্য প্রস্তুত হই এবং ‘শীতের সবজি ও ফল’ গুলির একটি তালিকা থেকে তার খাদ্যগুণ সম্বন্ধে জেনে নিই। গাজর গাজর ভিটামিন এ, বি, বি 2, বি 3, সি, ডি, ই এবং কে ভিটামিন এবং পুষ্টির অন্যতম উৎস গাজর। অন্য ফল ও সব্জির তুলনায় গাজরে ক্যারোটিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী। গাজরের উপকারিতা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও মসৃণতা বজায় রাখে, চুলের স্বাস্থ্য ও নখ ভাল রাখে। গাজরের ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে গাজর। শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে গাজরের ভূমিকা অনবদ্য। ওলকপি / শালগম এটি শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি স্বাদে মিষ্ট শ্বেতসার(starch) সমৃদ্ধ। এটি প্রচুর ফাইবার,কে, এ, সি, ই, বি , বি 3, বি 5, বি 6, বি 2, ফোলেট ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। ওলকপি/শালগমের উপকারিতা এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতে শালগমের বা ওলকপির উপস্থিতি স্তন ক্যান্সার, কোলন এবং রেকটাল টিউমারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ সমৃদ্ধ যা হার্ট অ্যাটাক, বিভিন্ন প্রকার হৃদ রোগ। কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। ফুসফুস সুস্থ রাখে। খাদ্যতালিকাতে ওলকপির উপস্থিতি অস্টিওপরোসিসের এবং রিমোটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিহত করে। এতে উপস্থিত প্রচুর ফাইবার পাচনতন্ত্র কে ভালো রাখে। সরিষা শাক সরিষা শাকে ক্যালোরি কম এবং ভিটামিন বি 1, বি 2, বি 6, সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, পটাসিয়াম এবং লোহা প্রভৃতি মিনারেল থাকে। সরিষা শাকের উপকারিতা এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার প্রতিহত করতে সহায়তা করে। হৃদরোগ প্রতিহত করে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে। আর্থ্রাইটিস,অস্টিওপরোসিস এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য সরিষা শাক অত্যন্ত উপকারী। মেথি শাক মেথি শাকের খাদ্যগুণ অপরিসীম। এতে প্রোটিন, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, বি 3, সি, এবং ই, এবং ফাইটোস্ট্রোজেন রয়েছে। মেথি শাকের উপকারিতা এটি রক্তে কোলেস্টেরল, শর্করার পরিমাণ কমায় বলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। স্তন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, আর্থ্রাইর্টিস, ত্বকের সমস্যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল প্রদাহের জন্যও ব্যবহৃত হয়। মাসিকের সময়কালীন ব্যাথা প্রশমন করে। পালং শাক শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়াতে পালং শাক খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। এতে ক্যালোরি কম থাকে। পালং শাকের পুষ্টিগুণ অনেক বেশী। পালং শাকের উপকারিতা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করে, শক্ত করে। রক্তচাপ কমায় রক্তে আয়রণের ঘাটতি মেটায়। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। ক্যান্সার, হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং হাঁপানি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী। মটরশুঁটি শীতকালে বাজারে মটরশুঁটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সবুজ মটরশুঁটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যাণ্টি অক্সি-ডেণ্ট সমৃদ্ধ। সবুজ মটর ভিটামিন সি, বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, ফোলেট এবং ফাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ। মটরশুঁটির উপকারিতা রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। কারণ এতে ক্যালোরির মাত্রা কম এবং ফাইবার যুক্ত। মূলো মূলোতে রয়েছে সোডিয়াম, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সেইসাথে ম্যাগনেসিয়াম। মূলোর উপকারিতা এটা পেশী, নার্ভ এবং রক্ত প্রবাহ মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী রাখে। মূলো ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে। এটি ফ্লু জাতীয় রোগ,ক্যান্সার এবং করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। বীট বীট অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। এতে আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ 6 ও ‘সি’ এবং মিনারেল রয়েছে। বীটের উপকারিতা লিভার detoxification প্রক্রিয়া সাহায্য করে। ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের সম্ভাবনা সীমিত করে। আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বেগুন বেগুণের অনেক পুষ্টিগুণ আছে। এতে প্রচুর ফাইবার, ম্যাঙ্গানীজ, ভিটামিন ‘বি’ আছে। বেগুণের উপকারিতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যান্সার, হার্টের রোগ এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। ওজন কমানোর জন্য বেগুন উপযোগী। মস্তিষ্কের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ত্বক এবং চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কমলালেবু এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ আছে। এছাড়া পটাসিয়াম, মিনারেল, ফোলেট এবং ফাইবার আছে। কমলালেবুর উপকারিতা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। আপেল এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ফাইবার আছে। পুষ্টির জন্য আপেল অনবদ্য। আপেলের উপকারিতা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। মরশুমি শাকসবজি, ফলমূল খান। নিজেকে তরতাজা রাখুন। ভালো থাকুন।




_edited.jpg)











