বাংলা সংবাদপত্রে প্রথম পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন।
- Piyali Debnath

- Nov 27, 2024
- 2 min read
Updated: Dec 7, 2024
কান পাতলেই চারিদিকে এখন সানাইয়ের সুর। আগামী ১২ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে ৪৮ লক্ষ বিয়ের আসর বসবে। তা থেকে ৬ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে ধারণা। গত বছর এই সময়ে ৩৫ লক্ষ বিয়ের আসর বসেছিল। তাতে বাণিজ্য হয়েছিল ৪.২৫ লক্ষ কোটি টাকার। কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স(সিএআইটি) এই তথ্য জানিয়েছে। ঠিক এরই হাত ধরে বিয়ের বিজ্ঞাপন-এর বাজারটিও নেহাত মন্দ নয়। এই প্রেম বা রাইট সোয়াইপ এর রমরমা বাজারেও পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন কিন্তু তার গরিমা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে চলেছে,; সে ছাপার অক্ষরই হোক বা ডিজিটাল ফন্ট-এ।

মূলত খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনই অনেকের কাছে পছন্দের পাত্র-পাত্রী খোঁজার অন্যতম হটস্পট। কিন্তু এর শুরু কোথায়? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে দেড়শো বছর!
সালটা ১৮৭১, তারিখ ১১ জুলাই - তৎকালীন বাংলার একটি সংবাদপত্র ‘এক্সচেঞ্জ গেজেট’-এ বেরোল একটি বিশেষ বিজ্ঞাপন। ‘বিবাহ’ শিরোনামের সেই বিজ্ঞাপন ছিল এইরকম -
‘একজন কর্মচারী যিনি ২০ বৎসর কর্মকার্য করিয়াছেন, এখন তাঁহার বিবাহ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে তিনি এমন একটি কনে চান যাহার বয়স ২৫ বৎসরের অধিক নহে এবং সংসারের কাজকর্মে বিশেষ নিপুণ। টাকাকড়ির প্রয়োজন নাই। বর বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে আছেন। কনেরা দরখাস্তের সঙ্গে যেন নিজ নিজ চেহারার ছবি পাঠাইয়া দেন। যাঁহার চেহারা পছন্দ না হইবে তাঁহার চেহারা [ছবি] ফিরাইয়া দেওয়া যাইবেক। কনেরা ও কে নামে শিরোনাম দিয়া, 'এক্সচেঞ্জ গেজেট' ছাপখানায় অধ্যক্ষের নিকট দরখাস্ত পাঠাইয়া দিবেন।’
ইতিহাস বলছে, বাংলা সংবাদপত্রে এটিই প্রথম পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন। এখনকার সময় কালের নিরিখে আপাত সাধারন ঘটনা মনে হলেও সেই সময় এই বিজ্ঞাপণ রীতিমত শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করতে চাওয়ার এই ‘অনাচার’ দেখে রক্ষণশীল সমাজ জেগে উঠল, রে রে করে তেড়ে এল বঙ্গসমাজ। এমনকি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেন অন্যান্য কাগজের সম্পাদকরাও। ‘সুলভ সমাচার’ পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়— ‘খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়া লোকে তো ঘর বাড়ি গাড়ি ঘোড়াই কিনিয়া থাকে কিন্তু বিজ্ঞাপন দ্বারা কিরূপে বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইতে পারে? এমন বিবাহের চেয়ে আইবুড়ো থাকা ভাল…’।
সাহেবি শিক্ষা এবং ইংরেজি শিক্ষাকেও কাঠগড়ায় তোলে তখনকার বঙ্গ সমাজ। এতে যে ‘সংসারে সুখ পাওয়া যায় না’,সেই কথাও ঘোষণা করে বলা হয়। তখন সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মানতে না চাইলেও ১৮৭১ সালের সেই বিজ্ঞাপন তখনকার প্রচলিত অনেক ধারণাকেই ভেঙে দিয়েছিল। শুরুটা যেমনই হোক না কেন আজকের প্রযুক্তির বিভিন্ন মারপ্যাঁচের যুগেও খবরের কাগজের সেই সনাতন পদ্ধতি্র ‘পাত্র-পাত্রী চাই’ আজও চার হাত এক করার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম।
তথ্য ঋণ – কলির শহর কলকাতা / হরিপদ ভৌমিক




_edited.jpg)



কত যে অজানা বিষয় জানতে পারছি। চালিয়ে যাও।