পিন্টু পোহান - বাংলা সাহিত্যের এক নিরলস পুজারী।
- Piyali Debnath

- Nov 6, 2024
- 2 min read
Updated: Nov 11, 2024
দারিদ্র্য, অনাহার, অপুষ্টি, অমানুষিক পরিশ্রম এবং বাংলা সাহিত্য―আশৈশব সঙ্গী তাঁর। তিনি শুধুমাত্র মাটি থেকে উঠে আসা নয়, মাটি দিয়েই যেন গড়া একজন মানুষ।
অনাহার ও দারিদ্রের দাপটে তিনি খড়কুটোর মত উড়ে যেতেই পারতেন, কিন্তু শৈশবেই যিনি বইকে আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাকে ছারখার করার সাধ্য কার! তিনি পিন্টু পোহান। পূর্ণচন্দ্র পোহান ও উজ্জ্বলা দেবীর পাঁচ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। লেখক পিন্টু পোহানের জন্ম ১৯৭৮-এ। বেহালা চৌরাস্তার মদনমোহনতলায়।

পড়ার সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলনা; তাই ছোট থেকেই কখনও বন্ধুর বাড়িতে আবার কখনও ঠোঙা তৈরির কাগজ কেনার অছিলায় কালোয়ারের দোকানে ছুটতেন বইয়ের খোঁজে। মাঠে মাঠে গোবর কুড়ানো আর জলায় নেমে শাকপাতা তোলা ছেলেটার মেধার পরিচয় প্রথম পেয়েছিলেন বড়িশা শশীভূষণ জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা ও তাঁর সহপাঠীরা। না,পরীক্ষায় প্রথম হননি, কিন্তু এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকত তাঁর নাম। অথচ আর্থিক কারণে বারবার বিঘ্নিত হয়েছে তাঁর পড়াশোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি
ইলেকট্রিকের কাজ, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ, রাস্তার ধারে ফুলের দোকান দেওয়া, বাজারে মাছ বিক্রি করা, কাপড়ের দোকানে কাজ, মেলায় মেলায় খাবারের স্টল দেওয়া, গ্রিল মিস্ত্রির হেলপার, সেলসম্যানের কাজ– অনেক কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নামতে হয়েছে কঠিন লড়াইতে। তবুও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় বরাবরের জন্য ইতি টেনে বেহালা চৌরাস্তার মদনমোহন তলায় তাঁকে দিতে হয়েছিল ছোট্ট একটি পানের গুমটি। সেটা ১৯৯৮ সাল।
তারপর দেখতে দেখতে আজ ২৬ টা বছর পার।
না। দারিদ্র তাকে দমাতে পারেনি, থাবা বসাতে পারেনি তার সাহিত্য প্রেমে। পিন্টু পোহান ইতিমধ্যেই ফুটপাতের এই পানের গুমটিতে বসেই ১২টা উপন্যাস লিখে ফেলেছেন। এই ফুটপাতে বসেই তিনি লিখেছেন ২০০-র ও বেশি গল্প, ২০০-র ও বেশি কবিতা। তাছাড়া অসংখ্য ছোট ও বড় গদ্য। সব মিলিয়ে তাঁর ‘প্রকাশিত’ লেখার সংখ্যা ২০০০-এরও বেশি। আর এই সবই তিনি লিখেছেন ফুটপাতে তার পানের গুমটিতে বসে- পান সাজতে সাজতে, খদ্দের সামলাতে সামলাতে একটানা ২৫ বছর ধরে। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা, আনন্দমেলা, সানন্দা, দেশ, চিরসবুজ লেখা, নবকল্লোল, শুকতারা, বর্তমান, প্রতিদিন, সাপ্তাহিক বর্তমান, শিলাদিত্য, কৃত্তিবাসের মতো বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।


তিনি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস― পঁচিশ বছর ধরে ফুটপাতে ছোট্ট একটা টিনের গুমটিতে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি সহ্য করে একটানা সাহিত্য রচনা করে। শুধু তাই নয়, পঁচিশ বছর ধরে বাজারের হাজারো মানুষের কোলাহল, গাড়ির হর্ণ, যানজটের চিৎকার উপেক্ষা করে সাহিত্যকে ভালোবেসে ফুটপাতে পান-বিড়ি-তামাক-সিগারেটের প্যাকেটের পাশে বসে দেশ-বিদেশের সাহিত্য পাঠে মগ্ন থেকে। শুধুমাত্র বইকে ভালোবেসে এই ফুটপাতে বসেই পড়াশোনা করে প্রথমে ব্যাচেলার ডিগ্রি ও তারপর মাস্টার ডিগ্রি করে। পঁচিশ বছর ধরে ফুটপাতে বসে লুম্পেনদের অত্যাচার, বাবুদের ব্যঙ্গবিদ্রুপ, অবুঝদের উদাসীনতা আর চরম দারিদ্র্য ও অভাব-অনটন সহ্য করেও একটানা লেখা ও পড়ার মধ্যে ডুবে থেকে।
উৎসাহ দেওয়ার লোক নেই, কারোর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস নেই, সাহিত্য তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তাও জানা নেই, পিনটু পোহান তবুও পঁচিশ বছর ধরে সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন; করে চলেছেন মা সরস্বতীর বন্দনা।




_edited.jpg)

Comments