'আমাকে ভাড়া করুন, আমার কোনও কাজ নেই'।
- Piyali Debnath

- Dec 5, 2024
- 2 min read
Updated: Dec 7, 2024
শোজি মোরিমোতো। জাপানের এই যুবকের বয়স উনচল্লিশ, ছিপছিপে লম্বা চেহারা, সাধারনের ভীড়ে তিনি একাকার। কিন্তু এই শোজি ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতার জোয়ারে ভেসে জনপ্রিয়তার তীরে এসে সাড়া ফেলে দিয়েছেন, বদলে দিয়েছেন সফলতার সংজ্ঞা। কলেজ থেকে পাশ করে বেরোনোর পরে কিছুদিন তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করেছিলেন। কোনও কারণে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বিদায়ের সময় প্রকাশনা সংস্থার উদ্ধত মালিক শিজোকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তুমি থাকলে না গেলে তাতে আমাদের কিছুই যায় আসবে না। শোজি কোনও জবাব দিতে পারেননি, মনে মনে দুঃখ পেয়েছিলেন।

দীর্ঘমেয়াদি বা ভদ্রস্থ কোনও কাজের সুযোগ যখন কিছুতেই জুটছে না, ২০১৮ সালে শোজি একটা টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে এক লাইনের একটি আবেদন ছড়িয়ে দিলেন ওয়েব দুনিয়ায় - ‘"Do Nothing Rent-a-Man"।এখন সেই অ্যাকাউন্ট-এ কয়েক লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে।
চার হাজারের বেশী জাপানি পুরুষ এবং নারী, শোজির এই ডাকে সাড়া দিয়েছেন। গোড়ার দিকে দাতব্য করলেও পসার জমার পরে তিনি গ্রাহকদের থেকে ১০ হাজার ইয়েন (প্রায় ৭০০০ টাকা) নেন শোজি। এছাড়াও, যাতায়াত ও খাবার খরচ আলাদাভাবে নেওয়া হয়। গত বছর প্রকাশিত রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ৪ বছরে মোরিমোতো ৪ হাজারেরও বেশি ক্লায়েন্টকে ‘পেইড সিটিং’ দিয়ে উপার্জন করেছেন। ক্লায়েন্টদের মধ্যে একজন ব্যক্তি প্রায় ২৭০ বার মরিমোটোকে ‘ভাড়া’ করেছেন তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। মোরিমোতো জানিয়েছেন যে, তাঁর বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট শুধুমাত্র মাইক্রো-ব্লগিং সাইটে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁকে ‘ভাড়া’ করেছেন।
শোজি তার এই বিচিত্র পেশা বর্ণনা করেছেন তার লেখা বই ‘Rental Person, who does nothing’- এ।

নানা জনে নানা কারণে ডেকে নেয় শোজিকে। কোনও বাড়িতে হয়ত কোনও খেলার জন্য একজন কম পড়েছে, শোজির ডাক পড়ল। তবে বেশিরভাগ ডাকেরই উদ্দেশ্য সঙ্গ লাভ। এলাকা ছেড়ে কোনও পরিবার হয়ত দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে শোজি গিয়ে তাদের বিদায় জানিয়ে এলেন। বনিবনা না হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী যাচ্ছেন ডিভোর্স দিতে, শোজি তাদের সহযাত্রী। এক যুবতী কবুল করেছেন তিনি বিভিন্ন দরকারে অন্তত দশবার মোরিমোতোকে ডেকে নিয়েছেন। হয়তো কোনও অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে প্রথমবার দেখা করতে গিয়েছেন, পাশে বসিয়ে রেখেছেন ভাড়া করা সঙ্গীটিকে। হয়তো কোনও দিন তার মনে হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদি গোপন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান, বন্ধুদের কারও কাছে মুখ খোলা যাবে না, নির্বাক শ্রোতার দায়িত্ব পালন করবেন শোজি। একজনের বক্তব্য, ‘হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন ধরে গড়িমসি করছিলাম, শোজি সঙ্গ দেওয়ায় আমার দ্বিধা কেটে গিয়েছিল।’ একবার এক মক্কেল তাকে বুক করেছিলেন নিজের সঙ্গে একটি খেলার পার্কে গিয়ে স্রেফ ঢেঁকি চড়ার জন্য!

দুই সন্তানের পিতা শোজি আরও জানিয়েছেন, যে কিছু লোক তাঁকে ঘর পরিষ্কার করতে, কাপড় ধুতে, নগ্ন হতে, বন্ধু হতে বলে। তবে শোজি এ ধরনের কাজ একেবারেই করেন না। অর্থাৎ, তিনি পেশাদারদের মতোই মানুষের সঙ্গে শুধু কথা বলেন।
একাকীত্বের সমস্যা এখন ভুবন জুড়ে, অনেকের কাছেই বিরতিহীন নিঃসঙ্গতা যেন গলায় দড়ির ফাঁস। এমন সময়ে কেউ যদি নীরব সঙ্গ দিতে আসে, নিজে চুপ থেকে অন্যের কথা মন দিয়ে শোনে তাকে তো মানুষ স্বাগত জানাবেই। শিজো মোরিমোতোর কাহিনী জানান দিচ্ছে, এমন ‘ডু নাথিং’ সঙ্গদানেরও একটা চাহিদা আছে।
শোজি মোরিমোতো মনে করেন যখন কেউ কিছু করতে চাইছে তখন তাকে সাপোর্ট করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাটি হল, স্রেফ তাদের পাশে থাকা। আসলে কিছু না করাটাও এক ধরনের সমর্থন।
মানুষের অসহায় নিঃসঙ্গতাবোধে আরামের মলম হওয়ার বা নিজেকে ভাড়া দেওয়ার শোজি মোরিমোতোর এই যে বিচিত্র পেশা তা নিঃসন্দেহে অনন্য ।




_edited.jpg)


অসাধারণ অসাধারণ। জ্ঞানভাণ্ডার ক্রমশ ফুলেফেঁপে উঠছে 😊😊