top of page

চোদ্দ শাক ও চোদ্দ প্রদীপ - জেনে নিন আড়ালের কাহিনী।

Updated: Nov 3, 2024


চোদ্দ
বাঙ্গালীর পার্বন - চোদ্দ শাক ও চোদ্দ প্রদীপ

চারদিকের এই ‘হ্যালোউইন’-এর বাড়বাড়ন্ত যুগেও 'ভূত চতুর্দশী' বাঙালির জীবনের একটি বিশেষ অঙ্গ। এই দিনটি কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং এটি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ, কৃষি এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গেও ওতোপ্রতভাবে জড়িত। ‘চোদ্দো শাক’ খাওয়ার রীতিও, এই উৎসবেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু বিশ্বাস নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক তাৎপর্য। আজ রাতে পুর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে চোদ্দ প্রদীপ উৎসর্গ করার আগে জেনে নিন চোদ্দ প্রদীপ ও চোদ্দ শাকের আড়ালে থাকা প্রচলিত এবং অপ্রচলিত কিছু সত্যি।


চোদ্দো শাকের গুরুত্ব: একটি বিশ্লেষণ


  • কৃষি ও পরিবেশ: চোদ্দো শাকের চাষ বাংলার কৃষিব্যাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।ভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত শাকের সহজলভ্যতা পক্ষান্তরে সুন্দর-সুগঠিত কৃষি ব্যবস্থাকেই ইঙ্গিত করে। বলা হয়, এই শাকগুলি মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়; যা পরবর্তী মরশুমের জন্য জমিকে প্রস্তুত করে। 


  • স্বাস্থ্য: “চরক সংহিতা” অনুযায়ী কার্তিক হল বাংলার প্রাক-শীত মাস। মৃত্যুর দেবতা যমের বাসস্থানের দিকে যাওয়ার প্রতিটি প্রবেশদ্বার কার্তিকা ঋতু জুড়ে খোলা থাকে।

    কার্তিক মাসের ঋতু পরিবর্তনের ফলে শরীরে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, যেমন শ্লেষ্মা, অগ্নিবৃদ্ধি ইত্যাদি, চোদ্দো শাক সেগুলি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, লম্বা শীতকালের আগে শরীরকে সুস্থ রাখতে এই শাকগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শুধুমাত্র এই নির্দিষ্ট দিনেই চোদ্দো শাক নয়, বরং মাঝেমধ্যে তা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাই উল্লেখ আছে ‘চরক সংহিতা’-তে। 


  • ধর্মীয় বিশ্বাস: এই ঘোর অমাবস্যার দিনে মর্ত্যে আসেন পূর্বপুরুষদের বিদেহী আত্মা। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এই ১৪ পুরুষ , জল, মাটি, বাতাস ও অগ্নির সঙ্গে মিশে রয়েছেন। আর এজন্যেই মূলত মাটির মধ্যে জন্মানো ১৪ টি বিশেষ শাক খেয়ে ১৪ পুরুষদের  উৎসর্গ করা হয় ভূত চতুর্দশীর দিনটি। আবার অন্য আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী, চোদ্দ ভুবনের অধীশ্বরী দেবীর উদ্দেশ্যে চোদ্দ শাক খাওয়া হয়।


শাক পরিচয়


শাক
চোদ্দ শাক

“ওলং কেমুকবাস্তুকং সার্ষপঞ্চ নিম্বং জয়াং। শালিঞ্চিং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ুচীন্তথা। ভন্টাকীং সুনিষণ্ণকং শিবদিনে যদন্তি যে মানবাঃ প্রেতত্বং না যান্তি কার্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।’’

ওপরে কৃত্যকৃত্ব বা রঘুনন্দন- উল্লেখিত শ্লোকটি হল চোদ্দো শাকের নাম ও তত্ত্ব। শ্লোকে উল্লেখিত চোদ্দো শাক হল-

১. ওল ডাঁটা

২. কেউ

৩. বথুয়া

৪. কালকাসুন্দ

৫. সরষে

৬. নিম

৭. জয়ন্তী

৮. শালিঞ্চে বা শিঞ্চে

৯. গুলঞ্চ

১০. পটল বা পলতা

১১. শেলুকা

১২. হিলমোচিকা বা হেলেঞ্চা

১৩. ভাঁট বা ঘেঁটু

১৪. সুনিষণ্ণক বা শুষনি


আয়ুর্বেদ মতে ১৪ শাক হল- 

১. পালং 

 ২. লাল 

 ৩. সুষণি 

 ৪. কুমড়ো 

 ৫. পাট 

 ৬. মেথি 

 ৭. ধনে

 ৮. পুঁই 

 ৯. নোটে

 ১০. মূলো 

 ১১. কলমি

 ১২. গিমে 

 ১৩. সরষে 

 ১৪. লাউ অথবা হিঞ্চে 

 

চোদ্দ প্রদীপের ইতিকথা


আলো
আলোর উৎসব দীপান্বিতা অমাবস্যা

কেউ বলেন দেবী কালী চামুণ্ডা রূপে ভূত এবং প্রেতাত্মা সঙ্গে নিয়ে ভক্তের বাড়িতে আসেন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে। কারওর মতে এই তিথিতে দৈত্যরাজ বলি পৃথিবীতে পূজা নিতে আসেন, সঙ্গে আসে নানা অশুভ শক্তি, অর্থাৎ ভূত এবং প্রেতাত্মা। অনেকে আবার মনে করেন পূর্বপুরুষের আত্মা এই তিথিতে মর্ত্যলোকে আসেন। তবে সব ক্ষেত্রেই অশুভ শক্তির আগমনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার জন্যই প্রাচীন কালে অগ্নি দেবতাকে পাহারায় রেখে নিশ্চিন্তে নিদ্রায় যেত মর্ত্যবাসী। 


বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে এই বছর 

চতুর্দশী শুরু :

বাংলা: ১৩ কার্তিক, বুধবার।

ইংরেজি: ৩০ অক্টোবর, বুধবার।

সময়: দুপুর ১টা ১৭ মিনিট।

চতুর্দশী শেষ:

বাংলা: ১৪ কার্তিক, বৃহস্পতিবার।

ইংরেজি: ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার।

সময়: দুপুর ৩টে ৫৩ মিনিট।

ভূত চতুর্দশী, শ্রীশ্রী ধর্মরাজ পূজা।


শুভ ভুত চতুর্দশী। আলোয় থাকুন, ভালো থাকুন।



1 Comment

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating
Guest
Nov 10, 2024
Rated 4 out of 5 stars.

Nice

Like
bottom of page