সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বা সান ভালেন্তিনো এবং প্রেম দিবস।
- Piyali Debnath

- Feb 14
- 1 min read
প্রাচীন রোমের লুপারকালিয়া :

কালের অতলে, যখন রোম ছিল দেবতা ও রাজাদের নগরী, তখন জন্ম নিয়েছিল এক আশ্চর্য উৎসব— ‘লুপারকালিয়া’। প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি, রোমান তরুণরা ছুটে বেরোত নগরের পথে, হাতে থাকত বলিদান দেওয়া ছাগলের চামড়া। সেই চামড়া দিয়ে তারা ছুঁয়ে দিত পছন্দের নারীদের, বিশ্বাস করত— এ ছোঁয়া নারীর গর্ভকে উর্বর করবে।
এই উৎসবের প্রতীকি রঙ ছিল লাল ।
লাল মানে রক্ত— রক্ত মানে নতুন প্রাণের প্রতিশ্রুতি। দেবতা লুপারকাস বা ফাউনাস, যিনি ছিলেন প্রকৃতির রক্ষক, তিনিই ছিলেন এই উৎসবের কেন্দ্র। উৎসব চলাকালীন বলিদানের ছাগল ও কুকুরের রক্ত দিয়ে রাঙ্গানো হত তরুণদের কপাল, আর নগরী বয়ে যেত বাঁধভাঙা উল্লাসে।
কিন্তু ক্রমেই এই উৎসবের পেছনে জমছিল কালো মেঘ, যা কালের স্রোতে ভয়ঙ্কর ঝড়ের রূপে নিজেকে প্রস্তুত করছিল।
রোমে প্রেম ভালোবাসা নিষিদ্ধ হল ।

সম্রাট ক্লডিয়াস -এর কঠোর শাসনে রোম যখন বাঁধা পড়ল, তখন প্রেমের মন্দিরে জমল কালো মেঘ। তিনি ঘোষণা করলেন, সাম্রাজ্যের যুব শক্তি যদি প্রেম-ভালোবাসা বা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তবে তারা যুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই রোমে ভালোবাসার শপথ, মিলনের প্রতিশ্রুতি সবটাই নিষিদ্ধ হল। সম্রাটের আদেশ অমান্য করে কার সাধ্য ! কিন্তু এক তরুণ বিদ্রোহ করে বসলেন, সে সম্রাটের এহেন আদেশ মানতে নারাজ। তিনি ছিলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, এক খ্রিস্টান পুরোহিত। প্রেমের প্রতিশ্রুতির সামনে শাসকের নিষেধাজ্ঞা তাঁর কাছে ছিল তুচ্ছ। তিনি গোপনে বিবাহ দিতে শুরু করলেন প্রেমিকযুগলকে, প্রেমের পবিত্র বন্ধনে প্রেমিক যুগলকে বেঁধে দেওয়াই যেন তার জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়াল।
সত্য চিরকাল গোপন থাকে না।

ভ্যালেন্টাইন বন্দি হলেন, সম্রাটের আদেশে মৃত্যুদন্ড ধার্য হল তার। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসার সেই যাজক রক্ত দিয়ে লিখলেন প্রেমের শেষ কবিতা। শোনা যায় মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর প্রিয়াকে লিখেছিলেন এক চিঠি, যার শেষে লেখা ছিল— "তোমার ভ্যালেন্টাইন"।
ভালোবাসা যার হৃদয়ে, তাকে কি শাস্তি দিয়ে মুছে ফেলা যায়?

সময় এগিয়ে এলো ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দ। পোপ গেলাসিয়াস I তিনি ঘোষণা করলেন, "লুপারকালিয়া পাপাচার, অনৈতিক। একে বিলুপ্ত করতে হবে!" বদলে তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস’ হিসেবে ভালোবাসার নামে উৎসর্গ করা হয় এই দিন। ‘রক্তের উৎসব আর নয়’ বলেও ফতোয়া জারি হল।
১৪শ শতকের কবি জিওফ্রে চসার তাঁর কাব্যে বললেন—"১৪ ফেব্রুয়ারি, এই দিনে পাখিরা জোড়া বাঁধে, হৃদয়ে প্রেম জাগে।" এভাবেই কবিতায়, গদ্যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল প্রেমের প্রতিবিম্ব রূপে। ক্রমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি শুরু হলো, ভালোবাসার মানুষকে লেখা হলো প্রথম "ভ্যালেন্টাইন কার্ড"।
ভালোবাসার শরীরে লাগল বাণিজ্যের ছোঁয়া।

১৮শ -১৯শ শতকে, হাতে লেখা ভালোবাসার চিঠির জায়গা নিল ছাপানো কার্ড। ২০শ শতকে, ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠল চকোলেট, গোলাপ, হীরের আংটি। ভালোবাসায় ক্রমে বানিজ্যের রঙ লাগল, বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সুযোগ বুঝে শুরু করল বাণিজ্যের নতুন খেলা— "ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাইলে উপহার দাও!" ফলস্বরূপ ভ্যালেন্টাইনস ডে মানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি গোলাপ বিক্রি, চকোলেটের পাহাড়, দামি উপহার আর বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার।
আজকের দিনে মনের মানুষটির সাথে ভালোবাসায় ভেলায় ভেসে যাওয়ার আগে একবার মনে করে নেবেন ভালোবাসা দিবসের এই ইতিহাস; যার প্রতিটা ইটে প্রাচীন রোমের লুপারকালিয়া উৎসব থেকে শুরু করে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগ, সবটা আজও মিশে আছে।




_edited.jpg)



আমি ভাবছি এখনকার দিনে ছাগলের চামড়া নিয়ে বেরোলে কী হবে। খুব অভিনব প্রতিবেদন