হেমন্তের পোস্টম্যান।
- Piyali Debnath

- Oct 2, 2024
- 1 min read

একটা বিশেষ কাজে বাড়ির কাছের এক মেডিক্যাল ক্লিনিকে যেতে হয়েছিল আজ। কাজ সেরে যখন বেরিয়ে আসছি, সূর্য দেবতা ততক্ষণে অস্তরাগে। বেলা ছোট, কোলকাতার বাতাস এখনও হেমন্ত কালকে পুরোপুরি বিদায় জানাতে পারেনি এবং ফুরফুরে মনকে উদাস করে দিয়ে কাছেই কোথাও একটা ছাতিম গাছ নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। গেটের বাইরে আমার অ্যাপ-ক্যাব অধীর অপেক্ষা করছে মিনিট পাঁচেক হল, কাজেই সামনের একজোড়া বৃদ্ধ দম্পতি আমার তাড়াহুড়োর গতি মন্থর করায় একটু বিরক্তই হলাম। গড়নে দীর্ঘ এবং পরনে সাধারণ বৃদ্ধের অবশ্য সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই!
পা চালিয়ে ওদের টপকে সিড়ি পেরোতে গিয়ে বুঝলাম সত্তরোর্দ্ধ বৃদ্ধ কেন পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে ভ্রুক্ষেপহীন। ওনার সঙ্গের জনের বামহাতে কয়েকদিনের পুরনো একটা প্লাস্টার, কাজেই জ্বলজ্বলে শাখাপলা শোভিত রুগ্ন ডানহাত তার ভরসাকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে সামলাচ্ছেন।
চোখে চোখ পড়তে বৃদ্ধা খানিক হেসে বললেন, 'শরীরটা দুর্বল তো, তাই সিড়ি দিয়ে উনি একা নামতে দিলেন না।' বলতে গিয়ে ঈষৎ কুচকে যাওয়া চামড়া খানিকটা রাঙা হয়ে উঠল যেন! কোনও একটা লেখায় সেই কবে ভালোবাসার উপমায় শাশ্বত, চিরন্তন এই শব্দগুলো পড়েছিলাম। আজ এক হেমন্তের পড়ন্ত বিকেল আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল, ছাপার অক্ষরের বাইরে এই শব্দগুলো এখনও যাপিত হয়! বিরক্তি ভুলে আমি এগিয়ে গেলাম। বৃদ্ধের অন্যহাতের দুটো ব্যাগ নিজের হাতে তুলে নিলাম যাতে ওদের ভরসার বাঁধন আরেকটু মজবুত করতে পারি।
না, এই লেখা আমার মহত্ত্বের দিললিপি নয়। এই লেখা রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে আমার একটুকরো বিকেলকে অমরত্ব দেওয়ার জন্য ওদের দুজনকে দিতে চাওয়া আমার পাতাজোড়া কৃতজ্ঞতা। আজকের সময়ে মাস-কাল-ঋতু নির্বিশেষে নিঃশব্দে প্রতিদিন যখন হাজার হাজার হৃদয় ভাঙছে তখন ভালোবাসায় আবার বিশ্বাস করানো এমন একটা মায়াজড়ানো আলোর বিকেল সব্বার জীবনে পাওনা হোক, সেই আশালতায় বুক বাঁধতেই এই লেখা।হেমন্তের পোস্টম্যান।




_edited.jpg)



Comments